ফোন পেলেই অক্সিজেন–অক্সিমিটার নিয়ে ছুটছেন তাঁরা
গতকাল বুধবার রাত ১০টা ২৩ মিনিট। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি। মুঠোফোনে বলা হলো দ্রুত অক্সিজেনের প্রয়োজন। দেরি না করে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ১৫ মিনিটের মধ্যে ওই বাড়িতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ও অক্সিমিটার নিয়ে পৌঁছে গেলেন চার তরুণ। ওই পরিবারে সাতজন করোনায় আক্রান্ত।
ওই সাতজনের মধ্যে এক নারীর অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৮৬। পরে দ্রুত ব্যায়াম করিয়ে আধঘণ্টা পর অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে ৯৭–৯৮–এ দাঁড়ায়। ওই নারী সুস্থ অনুভব করলে তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন পড়েনি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহরের নিলামপট্টি এলাকায় এক বৃদ্ধা নারীর (৬৫) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। খবর পেয়ে অক্সিজেন ও অক্সিমিটার নিয়ে তরুণেরা ওই নারীর বাড়িতে যান। তখন তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৭৬। পরে ব্যায়াম করিয়ে কাজ না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ৫০ মিনিট অক্সিজেন দেওয়া হয়। পরে তিনি স্বাভাবিক হলে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৮–এ দাঁড়ায়।
এভাবেই প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত কোনো না কোনো মানুষের বাড়িতে অক্সিজেন নিয়ে স্বেচ্ছায় ছুটে চলেছেন শেরপুর ইমাজেন্সি অক্সিজেন ব্যাংকের নালিতাবাড়ী শাখার তরুণ সদস্যরা।
করোনা মোকাবিলার লড়াইয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে ২৭ জুলাই থেকে উপজেলায় শেরপুর ইমাজেন্সি অক্সিজেন ব্যাংকের নালিতাবাড়ী শাখার সদস্যরা একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এই সেবা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে অক্সিজেন সেবার ব্যবস্থা করায় সংকটাপন্ন রোগীরা উপকৃত হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, আজ পর্যন্ত নালিতাবাড়ীতে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৫৪৫। তাঁদের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়ে ১৩ জন মারা গেছেন।
ইমাজেন্সি অক্সিজেন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অক্সিজেন সেবা দিতে উপজেলা ও পৌরসভায় ১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন।
অক্সিজেন সেবাকে নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীনের সহযোগিতায় ওই তরুণদের ২০টি পিপি দেওয়া হয়। তাঁদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা পরিষদের পুরোনো ভবনের একটি কক্ষ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই তরুণদের আইনজীবী হাফিজুর রহমান তিনটি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। এমন কী এই তরুণেরা অক্সিজেন শেষ হলে শেরপুর ইমাজেন্সি অক্সিজেন ব্যাংক থেকেও নতুন সিলিন্ডার পান। শেরপুর ইমাজেন্সি অক্সিজেন ব্যাংক থেকে কাজ পরিচালরার জন্য ইতিমধ্যে এই তরুণদের পাঁচটি অক্সিমিটার, হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে।
এক সেবাগ্রহীতার স্বামী রুবেল মিয়া জানান, ‘বিনা পয়সায় এই সময়ে অক্সিজেনের সেবা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। আমি এই কার্যক্রমে দারুণভাবে উপকৃত হয়েছি।’
ইমাজেন্সি অক্সিজেন ব্যাংক নালিতাবাড়ী শাখার সমন্বয়কারী অভিজিৎ সাহা জানান, ফোন পেলেই নাম–ঠিকানা জেনে তাঁরা অক্সিজেন ও অক্সিমিটার নিয়ে দ্রুত রোগীর বাড়িতে পৌঁছে যান। রোগীর অবস্থা বুঝে প্রথমেই তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। পরে শেরপুর হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোগীকে ব্যায়াম ও প্রয়োজনে অক্সিজেন দেওয়া হয়ে থাকে।
শেরপুর ইমাজেন্সি অক্সিজেন ব্যাংকের মুখপাত্র এস এম জোবায়ের বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের অক্সিজেন ও অক্সিমিটারের মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এ উপজেলার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নির্ধারিত চিকিৎসক রয়েছেন। মুঠোফোনে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁরা কাজ করছেন।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ীর ইউএনও হেলেনা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সময়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সেবা দিতে তরুণেরা স্বেচ্ছায় বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন। এটা প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁদের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সহযোগিতা করা হচ্ছে।