কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার
বইপ্রেমীদের আনাগোনায় দূর মাদকের আড্ডা
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ মানুষ বই পড়তে আসেন পাঠাগারটিতে। জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি অবসরটাও দারুণ কাটে পৌরবাসীর।
বছর দেড়েক আগেও জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত। আগাছা, গাছের ডালপালা, কাঠের টুকরাসহ বিভিন্ন জিনিস পড়ে ছিল। মানুষ দাঁড়াত না। সন্ধ্যা হলেই বসত মাদকসেবীদের আড্ডা। এখন সেখানে মনোরম পাঠাগার। বই পড়তে আসছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। বইপ্রেমীদের আনাগোনায় দূর হয়েছে মাদকের আড্ডা।
এমন চিত্র গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পৌর শহরের ব্যাংকের মোড় এলাকায়। প্রায় তিন বিঘা পরিত্যক্ত জায়গায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মনোরম পাঠাগার। নাম দেওয়া হয়েছে কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে বই পড়তে আসেন কয়েক শ মানুষ। বইয়ের সঙ্গে অবসরটা দারুণ কাটছে উপজেলাবাসীর।
ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগের মূলে ছিলেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিবলী সাদিক। তাঁর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তখন সহযোগিতার হাত বাড়ান স্থানীয় আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ আরও অনেকে। নির্মাণকাজ শেষে পাঠাগারটি উদ্বোধন করা হয় গত বছরের ১৪ অক্টোবর। বর্তমানে এই পাঠাগারে প্রতিদিন গড়ে ২০০ মানুষ বই পড়তে আসেন। পাঠাগারটি খোলা হয় সকাল ১০টায়, বন্ধ হয় রাত ৮টায়।
পাঠাগারটি গড়ে ওঠায় স্বস্তি ফিরেছে স্থানীয় লোকজনের মনে। তাঁরা বলছেন, আগে সন্ধ্যা হলেই জায়গাটিতে মাদকসেবীদের আড্ডা বসত। ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছিল। দাঁড়ানোর অবস্থা ছিল না। কিন্তু এখন পাঠাগার হওয়ায় পুরো এলাকার চেহারাই পাল্টে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা কাউসার আহমেদ বলেন, ‘আগে সন্ধ্যা হলেই বখাটেদের আড্ডা জমত। এখন পাঠাগার হওয়ায় সেসব আর নেই। এ কারণে আমরা সবাই খুশি।’
ইউএনও শিবলী সাদিক বলেন, কালীগঞ্জ রাজধানী ঢাকার খুব নিকবর্তী এলাকা। কিন্তু এখানে শিক্ষার হার মাত্র ৫৯ ভাগ, যা উদ্বেগের কারণ। তা ছাড়া শিশু-কিশোরদের বখে যাওয়া বা বইবিমুখতা, মানুষে মানুষে মারামারি, বিশৃঙ্খলা বা সমাজের অবক্ষয়ের বিষয়গুলো সামনে আসে তাঁর। আর এসব কিছুর সমাধান হিসেবেই বই পড়া বা জ্ঞানচর্চার বিষয়টি অনুধাবন করেন শিবলী সাদিক।
কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ঢোকতেই ব্যাংকের মোড়। এখানে একটি সরু গলি ধরে কিছুটা পশ্চিম দিকে এগোলেই একটি একতলা ভবন। এটিই পাঠাগার। পাঠাগারটির সামনে খোলা জায়গা। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। গাছগুলোর গায়ে ঝুলছে বই পড়ার গুরুত্বসংবলিত বিভিন্ন বার্তা।
খোলা জায়গা ছেড়ে পাঠাগারটির দরজায় পা রাখতেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক উজ্জ্বল ছবি। ছবিটি ধরেই ডানে, বামে, সামনে—সবখানে বইয়ের তাক। তাতে থরে থরে সাজানো হাজারও বই। এর মধ্য মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, গল্পসহ অন্যান্য বই নিয়ে করা হয়েছে আলাদা কর্নার। প্রতিটি তাকের সামনেই রাখা হয়েছে বসার ব্যবস্থা। এখানে বসেই বই পড়েন পাঠকেরা।