বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকবীর ইসলাম খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে তাকবীরের মায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ শাহরিয়ার তারিকের আদালতে এ আবেদন করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বগুড়ার ছাত্রলীগ নেতা তাকবীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
তাকবীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আবদুর রউফকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
অন্যদিকে নিজ সংগঠনের নেতা-কর্মীর হামলায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা তাকবীর ইসলাম খানের জানাজা শেষে দাফন আজ সকালে সম্পন্ন হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টায় শহরের মালতিনগর এমএস ক্লাব–সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে জানাজা হয়।
তুচ্ছ ঘটনার জেরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় ছাত্রলীগের একাংশ তাকবীর ইসলামের ওপর হামলা ও ছুরিকাঘাত করে। পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর গতকাল বিকেলে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাকবীর। মারা যাওয়ার আগে তাকবীর এক ভিডিও চিত্রে হামলার বর্ণনা দেন। ‘রউফ’ নামের একজন তাঁকে ছুরিকাঘাত করেছেন বলে ভিডিওতে বলেন তিনি। মারা যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ ভিডিও ভাইরাল হয়।
পুলিশ ও তাকবীরের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ধুনট উপজেলায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেখানে ছাত্রলীগের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে যাওয়ার পথে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবীর ইসলামের মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগে জেলা ছাত্রলীগের সদস্য জাহিদ হাসানের মোটরসাইকেলের। এতে দুই নেতার মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে ধুনট থেকে বগুড়া শহরের সাতমাথায় ফেরার পর সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের নেতা আবদুর রউফ ও তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে তাকবীর ইসলাম ও তাঁর সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে তাকবীর ইসলাম খানকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
তাকবীর ইসলাম খানের ওপর হামলার ঘটনায় গত শনিবার বগুড়া সদর থানায় তাঁর মা ও শহরের মালতিনগর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা আফরোজা ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এ মামলায় বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য জাহিদ হাসানসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে তাকবীর ইসলাম জিলা স্কুলের প্রধান ফটকের পশ্চিম পাশে বন্ধুদের সঙ্গে চা পান করছিলেন। এ সময় আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে তাকবীর ইসলামের মাথায় আঘাত ও ছুরিকাঘাত করেন।
বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের সরকারি আজিজুল কলেজ শাখার কর্মী ও শাজাহানপুর উপজেলার শৈলধুকড়ী গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ হোসেন বাদী হয়ে শনিবার তাকবীর ইসলামসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পাল্টা মামলা করেছেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় শনিবার থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এর মধ্যে তাকবীর ইসলামকে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন তাঁর মা আফরোজা ইসলাম। তাকবীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় এটি হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের জন্য বুধবার সকালে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। ওসি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।