বগুড়ায় রেলের ‘জলাধারে’ স্থাপনা
অভিযোগ উঠেছে, এই কাজে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে সহায়তা করছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলা সদরে রেলের জলাধার ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলের ওই জায়গা দখল করে বাবু কাজী নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ও তাঁর ভাই সজীব কাজী অবৈধভাবে এ স্থাপনা তৈরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কাজে গাবতলী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আজিজার রহমান পাইকার (৫৬) সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ওই জায়গা দখল ও জলাধার ভরাটে বাধা দিতে গেলে রেলওয়ের দুই কর্মচারীকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা আজিজার রহমানসহ তিনজনকে আসামি করে রেলওয়ের পক্ষ থেকে গাবতলী মডেল থানায় মামলা করা হয়।
এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাবতলী উপজেলা সদরের তিনমাথার অদূরে রেললাইনের দক্ষিণ পাশে বেশ কিছু জায়গায় জলাধার ছিল। গত আগস্টে শ্রমিক দিয়ে ওই জলাধার ভরাট শুরু করেন স্থানীয় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বাবু কাজী ও তাঁর ভাই সজীব কাজী। দখল করা জায়গার দাম প্রায় এক কোটি টাকা। খবর পেয়ে ১৫ আগস্ট রেলওয়ের হ্যামারম্যান লুৎফর রহমান ও ফিটার সহকারী আবিদ হাসান সেখানে গিয়ে মাটি ভরাট কাজ বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আজিজার রহমানের নেতৃত্বে রেলওয়ের দুই কর্মচারীকে মারধরের পর গাছে বেঁধে রাখা হয়। পরে গাবতলী রেলস্টেশনের মাস্টার গিয়ে দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করেন।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর ২ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করছে না।
এ সম্পর্কে রেলওয়ের বগুড়ার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী আসলাম হুসেন বলেন, রেলওয়ের দুই কর্মচারীকে মারধর, অপদস্থ ও হুমকির ঘটনায় ১৬ আগস্ট গাবতলী মডেল থানায় এজাহার দেওয়া হয়। দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর ২ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করছে না।
গত মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণকাজ চলছে। রাশেদুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক জানান, ভরাট করা জায়গায় ৪০ ফুট দীর্ঘ ও ২৫ ফুট প্রস্থের টিনের চার চালার তিনটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ঘর দলিল লেখকদের ব্যবহারের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেক ধরে নির্মাণকাজ চলছে।
বাবু কাজী জানান, রেলওয়ের কাছ থেকে ৮ শতাংশের ওই জলাধার মাছ চাষের জন্য ইজারা নিয়েছেন। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে লিজ নবায়ন নেই। তাঁর দাবি, জলাধারে নোংরা তরল বর্জ্য ফেলায় সেখানে দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়েছিল। এ কারণে রেস্তোরাঁয় লোকজন আসতে চাইতেন না। তা ছাড়া উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের দলিল লেখকেরা জায়গাটা ভাড়া নিতে চাচ্ছিলেন। তিনটি ঘর মিলে প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়ার চুক্তি হয়েছে।
বাবু কাজী আরও বলেন, ভরাটের কাজ চলাকালে রেলওয়ের দুজন কর্মচারী এসে কাজ বন্ধ করে দেন। শ্রমিকদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেন। অসুস্থ থাকায় ছোট ভাইকে সেখানে পাঠালে তাঁরা তাঁর সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। তখন আওয়ামী লীগ নেতা আজিজার রহমান উপস্থিত হলে তাঁর সঙ্গেও রেলওয়ের কর্মচারীরা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। তাঁদের মারধর করা কিংবা গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার অভিযোগ সঠিক নয়।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল রোববার পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আজিজার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গাবতলী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। কিন্তু আসামিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।