‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ কি উঠে গেছে’

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে বাধা ও নেতাকর্মীদের আটকের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন। বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫ পাটকলের ছয় হাজারের মতো স্থায়ী শ্রমিক এখনো পুরো বকেয়া পাওনা বুঝে পাননি। ২০১৩ সাল থেকে অবসরে যাওয়া প্রায় ২ হাজার ১০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী ভবিষ্য তহবিল ও অবসর ভাতার টাকা পাননি। এসব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বকেয়া পরিশোধ ও পাটকলগুলো পুনরায় চালু করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করতে গেলেও শ্রমিকদের বাধা দিচ্ছে প্রশাসন।

এসবের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শ্রমিকেরা। এ সময় শ্রমিকনেতারা বলেন, যেকোনো দাবি বা পরিস্থিতি নিয়ে অন্তত মানববন্ধন করা যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে সেটাও এখন আর করা যাবে না। তাহলে কি বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ উঠে গেছে?

গতকাল বুধবার সকালের দিকে খুলনার আটরা শিল্প এলাকায় মানববন্ধন করছিলেন শ্রমিকেরা। এ সময় ওই কর্মসূচি পালনে বাধা দেয় পুলিশ। কয়েকজনকে থানায়ও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা পর অবশ্য সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পাট-সুতা-বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ মল্লিক।

পাট-সুতা-বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ বলেন, ২০২০ সালের ৩০ জুন রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময় বলা হয়েছে, ৪৪ বছরে পাটকলগুলো ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। যদিও দেশের কোনো কোনো সংস্থায় সরকার বছরে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। সুতরাং পাট খাত বন্ধ করার জন্য এটি অজুহাত মাত্র। এর দায় কৌশলে শ্রমিকদের ওপর চাপানো হয়েছে। অথচ ব্যবস্থাপনা, ক্রয়-বিক্রয় কোনোটির সঙ্গে শ্রমিকেরা জড়িত নয়।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে আমার দেশ শিল্প না বাড়িয়ে, আধুনিকায়ন না করে কোটি কোটি বেকারের দেশে আরও বেকার তৈরি করা হচ্ছে। পাটকল বন্ধ করার পর মজুরি পরিশোধ আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধ করার বিধান থাকলেও বছরের পর বছর হাজার হাজার শ্রমিক–কর্মচারী তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত আছেন। ওই সময় বলা হয়েছিল, দুই মাসের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধ করা হবে এবং তিন মাসের মধ্যে মিলগুলো আধুনিকায়ন করে চালু করা হবে। কিন্তু বন্ধের পর ২২ মাস হতে চললেও এখনো সব পাওনা পরিশোধ হয়নি ও মিল চালু হয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনে খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, সরকার বলছে মিল বন্ধ করা হয়নি, শুধু বন্ধ করা হয়েছে উৎপাদন। যদি মিল বন্ধ না করা হয়, তাহলে শ্রমিক কলোনি থেকে কেন শ্রমিকদের উচ্ছেদ করা হলো, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ২৫টি পাটকল ও বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) ৩ হাজারের মতো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারের কোনো লোকসান হচ্ছে না?’

সংবাদ সম্মেলন থেকে ঈদের আগে শ্রমিকদের সব বকেয়া পাওনা পরিশোধ ও দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাট-সুতা-বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান, আঞ্চলিক কমিটির যুগ্ম সচিব মো. আলাউদ্দিন, গাজী মাসুম, আবদুর রশিদ, আমিরুল ইসলাম সরদার প্রমুখ।