বছরের প্রথম দিন গোলায় ধান তুলতে পেরে হাওরের কৃষকদের মুখে হাসি
বছরের প্রথম দিন সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে ওঠেন সবিতা রানী দাস। এরপর ধান রাখার খলা পরিষ্কার করে রাখেন এই কৃষকপত্নী। সাংসারিক কাজ শেষ করে অপেক্ষা করতে থাকেন নতুন ধানের। সকাল ১০টায় নিজ জমির ধান কেটে মাড়াই করে খলায় এনে রাখেন সবিতার স্বামী কৃষক মনি দাস। তাঁদের সঙ্গে ধান তোলার আনন্দে শরিক হয় বড় ছেলে পলাশ ও ছোট মেয়ে অর্পিতা দাস।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতি অনুযায়ী শুক্রবার ছিল বাংলা বছরের প্রথম দিন। ধান তোলার জন্য এ দিনটিকেই বেছে নেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওর এলাকার দাসনোওয়াগাঁও গ্রামের এই কৃষক দম্পতি। তাঁদের বিশ্বাস, বছরের প্রথম দিন গোলায় ধান ভরলে সারা বছর ভাতের অভাব হবে না।
শুধু সবিতা-মনি দম্পতি নন, আরও অনেক কৃষক পরিবার এদিন ধান কেটে গোলায় ভরেছেন। সবিতা রানী দাস বলেন, কৃষিই তাঁদের একমাত্র অবলম্বন। ৯ কেদার (৩০ শতাংশে এক কেদার) জমিতে এবার বোরো ধানের আবাদ করেছেন। বছরের প্রথম দিন শুক্রবার তিন কেদার জমির ধান কেটে গোলায় তুলেছেন। এ জন্য খুশি তাঁর পরিবার।
হাওরপাড়ের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের পাশাপাশি প্রতিটি ঘরের কিষানিরা ধান তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধান শুকানো, ঝাড়া ও বস্তাবন্দী করতে সমানতালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এসব কাজের ফাঁকে কথা হয় ভুরাখালি গ্রামের ফুলমতি বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২৪ কেদার জমিতে এবার বোরোর আবাদ করেছেন। ধান তুলতে পারলেই সারা বছর ভাতের অভাব হবে না। পাশাপাশি ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ জোগাতেও দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এ জন্য এইচএসসি পাস করা ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে স্বামীকে ধান তোলার কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তিনি।
বছরের প্রথম দিন এক কেদার জমির ধান কাটতে পেরে খুশি ভুরাখালি গ্রামের বর্গাচাষি সুলেমান মিয়া। তিনি বলেন, ছয় কেদার জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছেন। মালিককে দিয়ে যে ধান পাবেন, তাতে তাঁর পরিবারের সারা বছরের চাল হয়ে যাবে।
ধান কাটা উৎসবে শামিল হতে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছেন জগন্নাথপুর গ্রামের এম এ কাদির। পিংলার হাওরে ৩৬ কেদার জমিতে বোরো আবাদ করেছেন তিনি। নিজে শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে বছরের প্রথম দিন ধান কাটেন এম এ কাদির। তিনি বলেন, ‘কৃষক পরিবারের সন্তান হয়ে আমি গর্বিত। নিজে ধান কাটতে পেরে খুব ভালো লাগছে। নতুন ধানের ঘ্রাণ এক অন্য রকম অনুভূতি।’
এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার ২১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে। বছরের প্রথম দিন থেকে ব্যাপক উৎসাহে কৃষকেরা ধান কাটছেন। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে দ্রুত হাওরের ধান কৃষকের গোলায় উঠবে।