কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটা। ২০২১ সালের শেষ সূর্যটি তখন লাল আভা ছড়িয়ে পশ্চিমের আকাশে ঢলে পড়েছে। বালুচর থেকে আলো-আঁধারি পরিবেশে অস্তগামী শেষ সূর্যের ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা। কেউ হাতের তালুতে সূর্য রেখে, কেউ সূর্যের দিকে হাত তুলে, কেউ আবার পেছনে সূর্যাস্ত রেখে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। সোয়া পাঁচটার দিকে লাল সূর্যটা যখন সাগরে ডুবে গেল, তখন উপস্থিত সবার মুখে এক আওয়াজ, ‘বিদায় ২০২১’।
২০২১ সালকে বিদায় আর নতুন বছর ২০২২ সালকে বরণ করে নিতে আজ শুক্রবার সৈকতে সমবেত হয়েছিলেন অন্তত ৪০ হাজার পর্যটক। এর সঙ্গে যুক্ত হন স্থানীয় আরও ২০ হাজারের বেশি লোক। সব মিলিয়ে লাখো মানুষ হাত তুলে বিদায় জানান ২০২১ সালের উদিত শেষ সূর্যকে। তবে এবারও সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইট কিংবা ইংরেজি বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উদ্যাপনের কোনো আয়োজন নেই। এ কারণে কিছুটা হতাশ পর্যটকেরা।
ঢাকার শ্যামলী এলাকার থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম (৩৭)। তিনি বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপনের আশায় সৈকতে ছুটে এসেছিলাম। এখানে এসে দেখি, কিছুই নেই। এখন বালুচরে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যটাকে বিদায় জানিয়ে বর্ষবিদায় উদ্যাপন করলাম। একসঙ্গে হাজারো পর্যটক মিলে এখানে মিলিত হওয়ার আনন্দটাও অন্য রকম।’
সিলেটের কলেজছাত্র কফিল উদ্দিন (২৩) বলেন, পাঁচ বছর আগে তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে এই সৈকতে জীবনের প্রথম থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন করেছিলেন। তখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ব্যান্ড সংগীতে ছিল সৈকত এলাকায়। এখন কিছু নেই। সূর্যকে বিদায় জানিয়ে হোটেলে গিয়ে বাকি সময়টা পার করে দিতে হবে।
শরীয়তপুরের বিল্লাল হোসেন বলেন, এবার নিয়ে তৃতীয়বার এলেন। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের কোনো আয়োজন নেই, ভাবতেই অবাক লাগছে। সবকিছুই হচ্ছে নিরাপত্তার অজুহাতে। তবে হোটেলকক্ষের ভাড়া আর খাবারের দাম আগের মতোই বাড়িয়ে আদায় হচ্ছে।
কক্সবাজারের সাতটি হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সমন্বিত মোর্চা ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কয়েক দিন সৈকত এলাকার পাঁচ শতাধিক হোটেল-গেস্টহাউসের শতভাগ কক্ষ ভাড়া থাকে, কিন্তু আজ ৫০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ কক্ষ খালি পড়ে আছে। শহরে এখন পর্যটক অবস্থান করছেন ৭০ হাজারের মতো। হোটেল-গেস্টহাউসগুলোতে দৈনিক পর্যটকের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার।
পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে আবুল কাশেম সিকদার বলেন, মৌসুমজুড়ে নানা অঘটন, প্রোপাগান্ডা, শঙ্কা পর্যটকদের ভ্রমণে আসতে নিরুৎসাহিত করছে।
কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে কয়েক বছর ধরে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বন্ধ আছে। এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপনের কোনো আয়োজন রাখা হয়নি সৈকতে। তবে কয়েকটি তারকামানের হোটেলে সীমিত আকারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপনকে ঘিরে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে সাংস্কৃতিক বিনোদনের তেমন কিছু থাকছে না। তবু সৈকতে বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। পর্যটকের নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।