ঠাকুরগাঁওয়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতকে পৌঁছেছে। জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ৪২৮ দিনের মাথায় রোববার ৫০তম ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য দিল স্বাস্থ্য বিভাগ। একই দিন আরও ৪৯ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছে তারা, যা ২৪ ঘণ্টার হিসাবে এ বছরের সর্বোচ্চ। নতুন ৪৯ জন নিয়ে জেলায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৯৬৪ জনে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে, ঠাকুরগাঁওয়ের বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জিন এক্সপার্ট মেশিনে ও আধুনিক সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫০টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৪৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। একই সময়ে করোনায় সংক্রমিত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বছরের ১১ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ে করোনায় সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৯৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। জেলায় ২০২০ সালের ২৪ মে প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। ওই বছর করোনায় মারা গিয়েছিলেন মোট ২৯ জন। আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৩। পরের মে মাসে আরও তিনজন মারা যান।
চলতি জুন মাসে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গত ১২ দিনেই ১৪ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জুন এক দিনেই মারা যান চার রোগী। গত ১২ দিনে ৭৬২টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ২৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। করোনা শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বিশেষ করে ৭ জুন থেকে প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের রেকর্ড ভাঙছে। ৭ জুন ৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়; শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ। ৮ জুন ১০৬টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৩০ জন; শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। ৯ জুন ১১৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়; শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। ১০ জুন ১৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়; শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ০৭ শতাংশ। ১১ জুন ৪৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
সর্বশেষ ১২ জুনের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, শনাক্তের হার কিছুটা কমলেও শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এদিন ১৫০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাঁদের মধ্যে সদর উপজেলার ২৬ জন, বালিয়াডাঙ্গীর ১১ জন, রানীশংকৈলের ১০ ও পীরগঞ্জের ২ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত এপ্রিলের শেষ দিকে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মার্কেট, বিপণিকেন্দ্র ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিধিনিষেধ তখন ভেঙে পড়ে। সংক্রমিত মানুষের সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। রোববার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৫০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাকিবুল আলম বলেন, আগে গ্রামের মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ কম ছিল। এতে অনেকেই আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন। কিন্তু এখন গ্রামের মানুষই বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। মৃতদের প্রায় সবাই গ্রামের বাসিন্দা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে পারে।
এদিকে করোনাকালে বিধিনিষেধ অমান্য করে ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শনিবার ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫০ জনের জরিমানা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, দিন দিন করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ সচেতন না হলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।