সড়ক মজবুতকরণ
বছর যেতে না যেতে বেহাল
প্রায় সাড়ে ৪৭ কোটি ব্যয়ে ‘প্রশস্ত ও মজবুতের’ বছর পার হতে না হতেই সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে।
সড়কটির প্রশস্ত ও মজবুতকরণের কাজ শেষ হয়েছে এক বছর। এরই মধ্যে সড়কের পাশ ধসে পড়ছে। সড়কজুড়ে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য ফাটল। দেবে গেছে অনেক জায়গা। প্রায় সাড়ে ৪৭ কোটি ব্যয়ে ‘প্রশস্ত ও মজবুতের’ বছর পার হতে না হতেই সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে।
সড়কটি হলো যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জ-খাজুরা-রায়পুর-বাঘারপাড়া সড়ক। গত বছরের ৩০ জুন সড়কটির প্রশস্ত ও মজবুতকরণের কাজ শেষ হয়।
এ সম্পর্কে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ইটভাটার ট্রাক এবং ওভারলোডের কারণে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সড়কটির ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো দ্রুত ঠিক করে দেওয়া হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ, যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জোহরপুর থেকে বাঘারপাড়া পর্যন্ত কালিগঞ্জ-খাজুরা-রায়পুর-বাঘারপাড়া সড়ক প্রশস্তকরণসহ মজবুতকরণের কাজ করা হয়। সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার ৩৬৩ মিটার এবং প্রশস্ত ৫ দশমিক ৫ মিটার। ৪৭ কোটি ৩৮ লাখ ৬৭ হাজার ৬৩৩ টাকা ব্যয়ে যশোরের যৌথ
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিরিয়ারিং লিমিটেড–মো. মইনউদ্দিন (বাঁশি) সড়কটির কাজ করেছে।
১০ জুলাই গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির দুই পাশে অন্তত ১৫-২০ জায়গায় মাটি ধসে গেছে। এর মধ্যে খদ্দবনগ্রাম স্কুল ও ভদ্রডাঙ্গা ইটভাটার সামনে, চণ্ডীপুর আরামবাগের মোড়, ভাতুড়িয়া মোড়, মাঝিয়ালি যাত্রীবাহী ছাউনির পাশে, জহুরপুর কদমতলা বাজারের পূর্ব পাশে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি ধসে গেছে। বেতালপাড়া সড়কে ঢোকার মুখে পাড়সহ সড়কটি ভেঙে বড় সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে। শালবরাট কালীমন্দিরের পাশে এবং বিল জলেশ্বরে ঢোকার জায়গার সড়ক ভেঙে গেছে। সড়কজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ফাটলের মধ্যে পিচ ঢেলে দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। ভাঙা অংশ থেকে কিছুটা নিচের দিকে লোহার তৈরি তেলের ড্রাম কেটে লম্বা অংশ মাটিতে বাঁশ পুঁতে তার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। ওই জায়গায় মাটি ফেলে সড়কের ধস রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যানবাহনের চালক এবং পথচারীদের সতর্ক করতে এলাকাবাসীদের কয়েকজন লাঠির মাথায় লাল কাপড় জড়িয়ে সেই লাঠি সড়কের ভেঙে যাওয়া অংশের দুই পাশে পুঁতে রেখেছেন।
এ সময় কথা হয় তিনটি গ্রামের অন্তত ১০ জনের সঙ্গে। তাঁরা অভিযোগ করেন, এলাকার বেশির ভাগ বেলে মাটি। সড়কটি প্রশস্ত করার সময় ঠিকাদার মাটি কাটার যন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে সড়কের একেবারেই পাশের মাটি কেটে সড়কে দিয়েছেন। বৃষ্টিতে গোড়ার মাটি সরে সড়কের পাশ ভেঙে পড়ছে।
উপজেলার জোহরপুর গ্রামের আলী হায়দার বলেন, ‘সড়কের ভেঙে যাওয়া জায়গাগুলো বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে। বৃষ্টিতে সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার আমাদের কোনো কথা শোনেননি।’
বাঘারপাড়া গ্রামের সুজিত দেবনাথ বলেন, সড়কটি কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু হয়ে আছে। জায়গায় জাযগায় ফেটে গেছে। সড়কের পাশে পুকুর রয়েছে। পুকুরগুলোর পাড় থেকে সড়কের পাশের মাটি ধসে পড়ছে। সড়কের সমস্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
মাটির কারণে সড়কে সমস্যা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঠিকাদার মো. মইনউদ্দিন। তিনি বলেন, মাটির সমস্যা রয়েছে। এ জন্য এমনটা হয়েছে। এগুলো ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। সড়কটিতে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ ঠিক নয়।