বন্ধুদের সঙ্গে চঞ্চলের ফেরা হলো না ঢাকায়

সড়ক দুর্ঘটনা
প্রতীকী ছবি

বাল্যবন্ধু নাসির হোসেনের মামাতো বোনের বিয়ে। তাই রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চঞ্চল, মিরাজসহ নাসিরের সাত বন্ধু চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছিলেন বরগুনায়। বিয়ের অনুষ্ঠানও ভালোমতোই হয়েছে।

আনন্দ-উল্লাস শেষে ঢাকায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় সব আনন্দই যেন বিষাদে রূপ নিয়েছে। দুর্ঘটনায় চঞ্চলকে হারিয়ে সফরে থাকা ছয় বন্ধুর বিলাপ যেন থামছেই না।

আজ রোববার বিকেলে বরগুনা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে পণ্যবাহী একটি ট্রাকের চাপায় নিহত হন মো. চঞ্চল ভূইয়া (২৯)। তিনি রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার মান্নান ভূইয়ার ছেলে। চঞ্চল একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বন্ধু নাসির হোসেনের মামাতো বোনের বিয়েতে ঢাকা থেকে বরগুনার আমতলীতে যান চঞ্চলসহ সাত বন্ধু। বিয়ের মূল অনুষ্ঠান শেষে রোববার দুপুরে আমতলী থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর অংশের তাঁতীবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে আসা একটি পণ্যবাহী ট্রাক চঞ্চলকে চাপা দেয়। দুমড়েমুচড়ে যায় চঞ্চলের মোটরসাইকেলটি। ঘটনাস্থলে ছটফট করতে করতেই মারা যান চঞ্চল। খবর পেয়ে হাইওয়ে ও মাদারীপুর সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

চোখের সামনে চঞ্চলের এমন মৃত্যু দেখে দিশেহারা ছয় বন্ধু। তাঁরা মাদারীপুর সদর হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে চঞ্চলের মৃত্যুর খবর স্বজনদের জানাচ্ছেন আর কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন। বিলাপ করতে করতে চঞ্চলের বন্ধু মিরাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঢাকায় ফিরে চঞ্চলের বাড়িতে কী জবাব দিব? একসঙ্গে এলাম আর ফিরতে হচ্ছে বন্ধুর লাশ নিয়ে। কী থেকে কী হয়ে গেল, আমরা বলেকয়ে বোঝাতে পারব না।’

চঞ্চলের আরেক বন্ধু বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো ঘুরে দেখার ইচ্ছা ছিল। তাই ঢাকা থেকে আমরা বাসে না গিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ট্যুর করতেই মূলত বরগুনা যাই। ফেরার পথে আমাদের এমন কিছু হবে, তা চিন্তাও করতে পারি নাই। চঞ্চলের এমন মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে আমাদের।’

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, মোটরসাইকেলটি স্বাভাবিক গতিতেই আসছিল। তবে পেছন দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁকে চাপা দেয়। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলে ওই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাইওয়ে পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করেছে।