বন্যায় কালিয়াকৈরে ২০ স্কুলের পাঠদান অনিশ্চিত
প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ওঠায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে উপজেলার তুরাগ নদ, মকশ বিলসহ কয়েকটি বিলে বন্যার পানি বৃদ্ধি পায়। এতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে। এ ছাড়া কিছু বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তায় পাঁচ ফুট পর্যন্ত পানি জমে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে আছে। কোথাও কোথাও শ্রেণিকক্ষেই ঢুকে পড়েছে পানি। অথচ দেড় বছর পর শিক্ষার্থীদের নতুন করে বরণ করে নিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো প্রস্তুত হচ্ছিল। এসব এলাকার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন, বেঞ্চ, জানালা-দরজা মেরামত, বেসিন স্থাপন ও রঙের কাজ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের চারপাশের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। বিদ্যালয় খোলার আনন্দে শিশুরাও হয়ে উঠেছে প্রাণচঞ্চল। কিন্তু বন্যার কারণে সেই আনন্দে ভাটা পড়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি সরকারি কলেজ, ৫টি অষ্টম শ্রেণিকৃত বিদ্যালয়, ১টি বেসরকারি কলেজ ও ২টি কারিগরি ইনস্টিটিউট আছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার কমে যাওয়ায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলবে। এরই মধ্যে প্রায় সব বিদ্যালয়েই পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও উপজেলার ২০টি বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের মাঠে বন্যার পানি ওঠায় ক্লাস শুরু করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, গত বছরও বন্যায় উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে যায়। এতে অনেক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তী সময়ে এসব বিদ্যালয়ে কিছু মেরামতের কাজও করা হয়েছিল। এবার এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানি ও অতিবৃষ্টিতে বিদ্যালয়গুলো আবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বাসুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রায় পাঁচ ফুট পানি জমে আছে। বিদ্যালয়ের বারান্দায়ও পানি। আর এক দিন পর বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই ইউনিয়নের ঢালজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেওয়াইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। এই ইউনিয়নের প্রায় সব বিদ্যালয়ের একই অবস্থা। কোনোটি একেবারে ডুবে গেছে, আবার কোনোটির মাঠ পর্যন্ত পানি উঠেছে। একই অবস্থা দেখা গেছে মৌচাক ইউনিয়নের বাঁশতলী ও কুন্দাঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়েও।
বাসুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মালেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর শিক্ষার্থীদের দেখি না। দীর্ঘদিন পর তাদের সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে। আবার সেই হইচই হবে। কিন্তু বন্যার কারণে সবার মন খারাপ হয়ে গেছে।’
দেওয়াইর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, তাঁদের এলাকায় প্রতিবছরই বন্যায় রাস্তা ও স্কুলগুলো ডুবে যায়। তাই প্রতিটি স্কুল ও রাস্তা যদি পাঁচ-ছয় ফুট উঁচু করা যায়, তাহলে স্কুল ও রাস্তা আর বন্যার পানিতে ডুবে যাবে না।
বাঁশতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে ক্লাস করার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। স্কুলটি তুরাগ নদের পাড়ঘেঁষা হওয়ায় আর বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের মাঠে এখন হাঁটুপানি জমে আছে, যার কারণে ক্লাস করানো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমিতা ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাঠদানের প্রস্তুতি রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় পরিচালনার সব উপকরণ (হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র, মাস্ক, জীবাণুনাশক স্প্রে) প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে সরবরাহ করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, জেলায় মোট ৭৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কালিয়াকৈরে বন্যার পানিতে ২০টি বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। অন্য উপজেলাগুলোতে কোনো সমস্যা নেই। উপজেলার ১২২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টির মাঠ, রাস্তা ও বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি ওঠায় পাঠ পরিচালনা করা যাবে না।