বন্যাকবলিত কুড়িগ্রাম
‘বন্যা হামার ঈদ আনন্দ কাড়ি নিছে’
সদর উপজেলার যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বেগমগঞ্জ ও নাগেশ্বরী উপজেলার ৭টি চরে ঈদের তেমন কোনো আয়োজন নেই।
কুড়িগ্রামের উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের বুকের অবস্থান ফকিরের চরের। এই চরের কৃষক তাহের আলীর পাঁচ বিঘা জমির আউশ ধান, চার বিঘা জমির বাদাম ও সবজি এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর কোরবানির জন্য একটি ছাগল রেখেছিলেন। তবে পরিবারের টাকার প্রয়োজনে প্রাণীটিকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থায় পড়া তাহের আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পশু কোরবানি দেওয়া তো দূরের কথা, পরিবারের লোকজনক নতুন জামাকাপড় দিব্যার পাবার নই। এ বছর ঈদ নাই। বন্যা হামার ঈদ আনন্দ কাড়ি নিছে।’
আগামীকাল রোববার পবিত্র ঈদুল আজহা। তবে তাহের আলীর মতো কুড়িগ্রামে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। সদর উপজেলার যাত্রাপুর, ঘোগাদহ; উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বেগমগঞ্জ ও নাগেশ্বরী উপজেলার সাতটি চর ঘুরে ঈদ নিয়ে তেমন কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি এই প্রতিবেদকের।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরে বাস শাহাবুলের পরিবারের। তিনি মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেন। এতে কোনোমতে চলে যায়। সংসারে স্ত্রী রেহেনা বেগম, চার সন্তান ও মা রয়েছেন। এবারের বন্যায় তাঁর তিনটি ঘরের দুটি ভেঙে পড়েছে। মেরামত করার মতো টাকা নেই। একটি ঘরে সবাই গাদাগাদি করে থাকছেন। শাহাবুলের মাছ ধরার নৌকাটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ত্রাণসহায়তা ও ধারদেনা করে চলছেন।
শাহাবুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেরবার ঈদত তা–ও একটা ছাগল কোরবানি দিছলোং। এবার তা–ও নাই। ঈদের দিন এক কেজি গোশত কিনি খামো, তারও উপায় নাই।’
তাঁদের চরের বেশির ভাগ মানুষ গরিব উল্লেখ করে হাতিয়া ইউনিয়নের কলাতিপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ লোকমান হোসেন বলেন, বন্যার পর থেকে মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁরা দুই বেলা ঠিকমতো খেতে পারেন না। কোরবানি দেবেন কীভাবে।
যাত্রাপুরের গারুহারা গ্রামের আবদুল খালেক গরুর ব্যবসা করেন। তিনি জানান, আগে প্রতি গ্রামে কোরবানি দেওয়ার মতো দু–চারজন লোক পাওয়া যেত। এবার কোরবানি দেওয়ার মতো লোক নেই। তিনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁর বাড়িঘর দেখিয়ে আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেহেন না কী অবস্থা! বাড়িঘর ঠিক করমো নাকি কোরবানি দিমো’।
তবে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক দাবি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ভিজিএফ চাল বিতরণে বন্যার্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও থেকে চরগুলোতে গরু কোরবানি করা হবে। ফলে তাঁরা ভালোভাবে ঈদ উদ্যাপন করতে পারবেন।