এ ছাড়া ঈদের আগের দিন গতকাল সন্ধ্যায় নগরের ফকিরবাড়ি রোডে বাসদের জেলা কার্যালয়ে দুস্থ মানুষের মধ্যে ঈদ উপকরণ বিতরণের মধ্য দিয়ে ‘মানবতার ঈদ উৎসব কার্যক্রম’ শুরু হয়। গতকাল ৩০০ দুস্থ পরিবারের প্রত্যেককে ১ কেজি পোলাওয়ের চাল, ১ প্যাকেট সেমাই, আধা কেজি চিনি, দুধ ও সাবান দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বাসদের জেলা সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী আজ প্রথম আলোকে বলেন, করোনাকালে অনেক মানুষ জীবিকা হারিয়েছেন। অনেকে পুঁজি খুইয়ে পথে বসেছেন। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও মানুষের আয় কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন। খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই বেশির ভাগ মানুষের কাছে দুঃসাধ্য। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের উৎসবে শামিল হওয়া তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। সেই বিবেচনা থেকেই তাঁরা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। মানুষের সহযোগিতায় তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন।
মনীষা আরও বলেন, কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বুঝেছেন, এমন আরও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। ঈদসহ সব উৎসবে দুস্থ মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় আয়োজন থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন। অসচ্ছল মানুষের জন্য সব উৎসবে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দেওয়া গেলে সবাই উৎসবে শামিল হতে পারবেন বলে জানান তিনি।
৩৫০ জনকে রান্না করা খাবার দিল ‘হোপ বরগুনা’
এদিকে বরগুনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হোপ বরগুনা’ বরগুনা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আজ দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৫০ জন দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করে। খাবারের মধ্যে ছিল পোলাও, মুরগির রোস্ট ও ডিম। এ ছাড়া ঈদের দিন শিশুদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে ২৫০ শিশুকে বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও চকলেট দেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকেরা। এর পাশাপাশি গতকাল ৫০ শিশুকে নতুন জামা ও ৪০০ পরিবারের মাঝে সেমাই, দুধ, চিনি, নুডলসসহ বিভিন্ন ঈদ উপকরণ বিতরণ করে সংগঠনটি।
হোপ বরগুনার স্বেচ্ছাসেবীরা আজ দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শহরের হাসপাতাল সড়কের পেছনের বস্তি, শহীদ স্মৃতি সড়ক, বড়িয়ালপাড়া, কেজি স্কুল সড়ক, গগন স্কুল এলাকা, কালীবাড়ি রোড, ডিকেপি সড়ক, ব্যাংক কলোনি, পিটিআই এলাকা, আমতলাপাড়, ক্রোক স্লুইস, হাজারবিঘা এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় রান্না করা এসব খাবার মানুষের হাতে তুলে দেন। ‘হোপ বরগুনা’ এ সহায়তা কার্যক্রমের নাম দিয়েছে ‘ঈদের খুশি’। সংগঠনটির এমন উদ্যোগে ঈদের দিনে ভালো খাবার খাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিম্ন আয়ের মানুষ।
সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকেরা জানান, করোনাকালে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ২০২০ সাল থেকে সংগঠনটি জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষেকে সহায়তায় এগিয়ে আসে। নিজেদের উদ্যোগে তারা আড়াই বছর ধরে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহযোগিতা করছে। ২০২০ সালে করোনাকালে বিধিনিষেধ শুরু হলে তাদের এ কার্যক্রম শুরু হয়। খাদ্যপণ্য সহায়তা, বৃদ্ধদের চিকিৎসা সহায়তার অর্থ, শিশুদের জন্য দুধ, ডিম ও পুষ্টিকর রান্না করা খাবার, কিশোরীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার, খাদ্যপণ্য, বিধবা নারীদের এক মাসের খাদ্যপণ্য, ঘর তোলার সহায়তা, রমজানে ইফতারি বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চালিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটির সহপ্রতিষ্ঠাতা তরুণ উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার সময় মানুষের আয়-রোজগার কমে যায়। এতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে আমরা কয়েকজন তরুণ মিলে “হোপ বরগুনার” কার্যক্রম শুরু করি। মাঠে কাজ করতে গিয়ে আমরা লক্ষ করেছি, মানুষের শুধু খাদ্যপণ্য নয়, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের আলাদা আলাদা চাহিদা আছে। আমরা সেই অনুযায়ী সহায়তা দেওয়া শুরু করি।’
রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কার্যক্রম বন্ধ করেননি। এর ধারাবাহিকতায় এবার ঈদে তাঁরা নানা সহায়তা নিয়ে দুস্থ, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। করোনা এবং করোনা-পরবর্তী অভিঘাত ও বাজারের চাপে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই আর্থিক সংকটে আছেন। এ চিন্তা থেকেই তাঁদের এই উদ্যোগ।’