বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর মৃত্যু, পুলিশ বলছে ‘রহস্যজনক’
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মালিহা ফরিদী ওরফে সারা (২০) নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
মালিহা বরিশালে ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (স্নাতক) ছাত্রী ছিলেন।
আজ সোমবার সকালে হাসপাতালের মর্গে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালিহার লাশ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। বিকেলে ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা। এর আগে গতকাল রোববার গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চিকিৎসকদের নিয়ে হিমঘরে গিয়ে লাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
এর আগে শনিবার রাত ১১টার দিকে মালিহা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জানিয়ে কয়েকজন তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। ওই রাতেই তিনি মারা যান। স্বজন পরিচয় দিয়ে যাঁরা তাঁকে হাসপাতালে রেখে গিয়েছিলেন, তাঁদের খোঁজ না পাওয়ায় তাঁর লাশ সেখানেই পড়ে ছিল। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হলে গতকাল কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ হাসপাতাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
পরে জানা যায়, মালিহা বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এ কে এম ফরিদ আহমেদের মেয়ে। তিনি নগরের কলেজ অ্যাভিনিউ এলাকার ৩ নম্বর লেনের একটি ফ্ল্যাটে একা থাকতেন। বাড়িভাড়া নেওয়ার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশের সরবরাহ করা ভাড়াটে তথ্য ফরমে তিনি স্বামীর নাম উল্লেখ করেন মো. তানভীর রাফি। গতকাল রাতে তথ্য ফরমে উল্লেখ করা মালিহার বাবার মুঠেফোন নম্বরে কল করা হলে এক তরুণ সেটি ধরেন। ফরিদ আহমেদ আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ফরিদ আহমেদের নম্বর নয়।’ ভাড়াটে ফরমে স্বামীর যে নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে, তা ১০ অঙ্কের। এটি ১১ সংখ্যার হয়।
পুলিশ বলছে, মালিহার মৃত্যু রহস্যজনক। তিনি যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়ির মালিক ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, মালিহার সঙ্গে মো. ইমন নামের এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শনিবার রাতে ইমনের মা–বাবাই মালিহাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ ইমনের মা–বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
ইমনের মা–বাবা পুলিশকে জানান, শনিবার রাতে মালিহা তাঁদের ফোন দিয়ে জানান যে তিনি খুব অসুস্থ। এরপর রাত দেড়টার দিকে তাঁরা মালিহার ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁকে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তখন তাঁরা মালিহার বাবাকে কিছুই জানাননি। রোববার সকালে তাঁরা মালিহার বাবাকে ফোন দিয়ে জানান যে তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, ইমনের মা–বাবার আচরণ সন্দেহজনক। তাঁরা অসংলগ্ন কথা বলছেন। তাঁরা পুলিশের কাছে কোনো কিছু গোপন করার চেষ্টা করছেন বলে মনে হচ্ছে। তা ছাড়া মালিহার গলায় ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন আছে।
তবে মালিহার বাড়ির আশপাশের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার রাতে মালিহা তাঁর বাসার সামনে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন। কিন্তু এসব কথা ইমনের মা–বাবা পুলিশকে জানাননি।
বরিশাল কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাত দেড়টার দিকে মালিহাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ এই মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, না আত্মহত্যা করেছেন; তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।