বরিশালে শিশু ইয়াসিন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি পুলিশের
বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকা থেকে শিশু ইয়াসিনের (৯) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, ইয়াসিনকে তার দাদির বোনের স্বামী সিরাজুল ইসলাম কুপিয়ে হত্যা করেছেন। পরে তার লাশ বরিশাল বেতার কার্যালয় লাগোয়া একটি পরিত্যক্ত শৌচাগারে ফেলে রাখা হয়। সিরাজুল তাঁর ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকদের ফাঁসাতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিরাজুল একাই এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ মামলায় একমাত্র আসামি হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকা থেকে শিশু ইয়াসিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুরে অভিযুক্ত সিরাজুল, তাঁর স্ত্রী আলেয়া বেগম ও ছেলে আল আমিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে বরিশাল কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজুল পুলিশের কাছে এ হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। রোববার বিকেলে সিরাজুল বরিশালের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে এ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা না থাকায় শনিবার রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজুল বলেছেন, বাসায় বেড়াতে আসা শিশু ইয়াসিনকে তিনি কুপিয়ে হত্যা করেছেন। হত্যার পর শিশুটির খোঁজ চেয়ে এলাকায় মাইকিং করানো হয়। এমনকি লাশ উদ্ধারের সময়ও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন তিনি।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আট মাস আগে নগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সোহরাফ খান হাউজিংয়ের দিনমজুর জাকির সরদারের মেয়ে ইতি আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় সিরাজুল ইসলামের ছেলে আল আমিনের। বিভিন্ন কারণে তাঁদের সংসার সুখের ছিল না। তাঁদের বিবাদ নিয়ে কয়েকবার সালিসও হয়েছে। এ নিয়ে আল আমিনের শ্বশুর জাকির সরদার তাঁদের নামে বেশ কয়েকটি মামলাও দিয়েছেন। মামলা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছিলেন সিরাজুল। জাকির সরদারকে ফাঁসাতে সিরাজুল শিশুটিকে হত্যা করে লাশ শৌচাগারে ফেলে রাখেন।
পুলিশ জানায়, ইয়াসিনের বাবা সগির হোসেন ঢাকার মহাখালীতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। শিশুটি বরগুনা সদরের বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুরি গ্রামে দাদি শিরীন বেগমের সঙ্গে থাকত।
শিরীন বেগম বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি ইয়াসিনকে নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালে আসেন তিনি। নগরের রূপাতলী এলাকার রজ্জব আলী খান জামে মসজিদসংলগ্ন এলাকায় বোন আলেয়া বেগমের বাসায় ওঠেন। এরপর শিরিন বেগম বোনের বাসায় থেকে কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। টাকা জোগাড় হওয়ায় শনিবার নাতি ইয়াসিনকে নিয়ে বরগুনায় যাওয়ার কথা ছিল। এরপর শুক্রবার সকালে ইয়াসিনকে বোন আলেয়া বেগমের বাসায় রেখে কাজে যান শিরিন বেগম ও দুপুরের মধ্যে ফিরে আসেন। এ সময় ইয়াসিনকে বাসায় না দেখে কোথায় গেছে জানতে চাইলে তাঁর বোন জানান, বেলা ১১টার দিকে বাইরে গেছে।
শিরিন বেগম বলেন, প্রথমে মনে করেছিলেন পাশের কোথাও খেলাধুলা করতে গেছে। তবে বেলা বাড়ার পরও ফিরে না আসায় বোন আলেয়া, তাঁর স্বামী সিরাজুল ও তাঁদের ছেলে আল আমিনকে নিয়ে খুঁজতে বের হন। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত নাতির কোনো খোঁজ না পেয়ে ঢাকায় তাঁর ছেলে সগির হোসেনকে বিষয়টি জানান। ছেলে ও তাঁর বর্তমান স্ত্রী খবর পেয়ে শনিবার সকালে বরিশালে এসে পৌঁছান। এরপর কেউ একজন জানান যে বসুন্ধরা হাউজিংয়ের মধ্যে রেডিও সেন্টারের দেয়াল–সংলগ্ন পরিত্যক্ত শৌচাগারে এক শিশুর লাশ পাওয়া গেছে। সেখানে গিয়ে দেখেন ইয়াসিনের গলাকাটা লাশ।
নিহত ইয়াসিনের বাবা সগির হোসেন বলেন, তাঁর প্রথম সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলে। ইয়াসিন ছোট। ছেলের বয়স যখন চার–পাঁচ বছর, তখন স্ত্রী ফাতেমার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর ছেলেমেয়ে তাঁর ও মা উভয়ের কাছে থেকে বড় হচ্ছিল। বছরখানেক আগে মনোয়ারা নামের এক নারীকে বিয়ে করেছেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকেন। ছেলে তাঁর মা শিরিন বেগমের কাছে রেখে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তাকে বরগুনার স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করার কথা ছিল।