বরিশাল সদরে প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে চার দিনের থমথমে অবস্থার অবসান হয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে নগরবাসীর মনে। ১৮ আগস্ট রাতে সদর উপজেলা পরিষদে হামলা-সংঘর্ষসহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এর জেরে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনাও ঘটে। তবে গতকাল রোববার রাতে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়।
প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ইউএনওর বাসভবনে হামলা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ১৮ আগস্ট রাতে পুলিশের সংঘর্ষসহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে দলের নেতাদের বৈঠক হয় গতকাল। রাত সাড়ে আটার দিকে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসানের সরকারি বাসভবনে এই বৈঠক হয়। রাত ১১টা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি যাতে আর সামনে না বাড়ে, সে বিষয়ে সবাই সম্মত হয়েছেন। বরিশাল শহরের রাজাবাহাদুর সড়কে বিভাগীয় কমিশনারের সরকারি বাসভবনে এই বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনার ছাড়াও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল নগর পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আক্তারুজ্জামান, র্যাব-৮-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল হাসান, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসাইন উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলে, ওই রাতের ঘটনা ‘ভুল–বোঝাবুঝি’ থেকে হয়েছে বলে আলোচনা হয়। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে সবাই একমত হন। একই সঙ্গে শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবাই সহযোগিতা করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে বিভাগীয় কমিশনারের বাড়ির সামনে প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা ছবি তোলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ তালুকদার মো. ইউনুস গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রথম আলোক বলেন, ‘সমঝোতা হয়েছে বা হয়নি—এ মুহূর্তে আমি কোনোটাই বলতে চাই না। তবে আপনারা যেটা চান, অর্থাৎ শান্তি, সেটা হবে। আমরা সে লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছি। সময় হলেই সব জানা যাবে।’
অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সভায় দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলাগুলো সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) সঙ্গে আইনগত দিক আলোচনা করে প্রত্যাহারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল গভীর রাতে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এ বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, অতীতের ভুল–বোঝাবুঝি ভুলে নান্দনিক বরিশাল গড়ার লক্ষ্যে নগর প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
আজ সকালে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না। তবে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতি অবসানে সমঝোতা হয়েছে।’