বরিশাল থেকে তিন চাকার যান, ট্রাকে ঢাকায় ছুটছেন মানুষ
গার্মেন্টস ও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় আজ শনিবার সকাল থেকে বরিশালের মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। এর বেশির ভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক। যানবাহন না পেয়ে হেঁটে, রিকশা, ভ্যান, তিন চাকার যান কিংবা পণ্যবাহী ট্রাকে যে যেভাবে পারছেন ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
শনিবার সকাল থেকেই বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় রাজধানীমুখী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস টার্মিনাল এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। তবে কঠোর বিধিনিষধের কারণে দূরপাল্লার যানবাহন না পেয়ে অনেক যাত্রীকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা যায়। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা একপর্যায়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে চলাচলরত পণ্যবাহী ট্রাকের পথরোধও করেন। খবর পেয়ে বিমানবন্দর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল স্বাভাবিক করে।
বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
পোশাকশ্রমিকেরা বলছেন, পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ১ আগস্ট উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি আর লকডাউন উপেক্ষা করেই তাঁদের রাজধানীমুখী হতে হচ্ছে।
ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তানিয়া আক্তার (২৭) ও তাঁর স্বামী। এই দম্পতি ঢাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। কারখানা খোলার খবর পেয়ে খুব সকালে তাঁরা বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। কোনো গণপরিবহন না পেয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশায়, সিএনজিতে ভেঙে ভেঙে বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ পৌঁছাতে বেলা গড়িয়ে সাড়ে ১২টা বেজে যায়। তখন নথুল্লাবাদসংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানুষের ঢল। কীভাবে যাবেন সে জন্য অপেক্ষা করছেন। সঙ্গে ভারী দুটি ব্যাগ, বস্তাসহ অনেক মালামাল। বৃষ্টি, দুর্ভোগ, অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে ঢাকায় ফেরার জন্য কী যে সংগ্রাম, তা তাঁদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে।
তানিয়া বলেন, ‘কারখানা বন্ধ অওনে গ্রামে আইছালাম। কাইল খোলবে, যদি বাড়ি বইয়্যা থাহি তয় খামু কী। হেইতে এতো কষ্ট কইর্যা রওয়ানা দিছি। ঘরে খাওন থাকলে কি কোনো মানুষ এই সময় ঘরদিয়া নামে।’
তানিয়ার মতো হাজারো শ্রমজীবী মানুষ দেখা গেল, নথুল্লাবাদ, রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে। তাঁদের অনেকেই তিন চাকার যানে, রিকশা-ভ্যানে ট্রাকে গাদাগাদি করে গন্তব্যে ছুটছেন। আবার অনেকে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে সামনে এগোচ্ছেন। সবার গন্তব্য ঢাকা। অনেকের মতো হেঁটে রওনা হয়েছেন আবুল কালাম নামে বাকেরগঞ্জের এক তরুণ। তাঁর হাতে ও পিঠে দুটি ব্যাগ। আবুল কালাম পোশাক কারখানার শ্রমিক। কালাম বলছিলেন, ‘এত লোক এখানে অপেক্ষা, একটা যানবাহন পেলে হুড়োহুড়ি করে মানুষ উঠে পড়ছে। তাই সামনে যাই, দেখি কিছু একটা পেয়েই যাব।’
কোনো গণপরিবহন না থাকায় তিন গুণ ভাড়া দিয়ে বরগুনার বেতাগী থেকে বরিশালে এসেছেন সানাউল ইসলাম। এখন এখানে এসে কোনো যানবাহন না পেয়ে দারুণ বিপাকে পড়েছেন তিনি। সানাউল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার বিধিনিষেধের মধ্যে পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু লাখ লাখ শ্রমিক এখন ঢাকার বাইরে। এঁরা কীভাবে ঢাকায় যাবেন। অথচ তাঁদের ১ আগস্টের মধ্যে কারখানায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার অসংখ্য শ্রমিক রাজধানীর বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ঈদুল আজহার সময় আট দিন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় পোশাক শ্রমিকেরা ওই সময়ে বাড়ি ফিরেছিলেন।