বরিশাল থেকে লঞ্চ চলাচল করছে না
সরকার অনুমতি দিলেও বরিশাল থেকে কোনো লঞ্চ যাত্রী পরিবহন করবে না। তবে সীমিত পরিসরে গতকাল শনিবার রাত থেকেই কিছু বাস চলাচল করছে।
তৈরি পোশাক ও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় শনিবার সকাল থেকে বরিশালের মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। এর বেশির ভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক। যানবাহন না পেয়ে হেঁটে, রিকশা ভ্যান, তিন চাকার যানবাহন কিংবা পণ্যবাহী ট্রাকে যিনি যেভাবে পারছেন, ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। দিনভর মানুষের এমন দুর্ভোগ লাঘবে শনিবার রাত ৮টায় সরকার রাত থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীবাহী লঞ্চ-বাস চলাচলের অনুমতি দেয়।
লঞ্চ চালানোর ঘোষণা শুনে শনিবার রাত আটটার পর বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে শত শত যাত্রী ছুটে আসেন বরিশাল নৌবন্দরে। সেখানে এসে জানতে পারেন, সরকারি ঘোষণা থাকলেও ঢাকার উদ্দেশে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যাবে না। এতে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। লঞ্চমালিক ও শ্রমিকেরা বলছেন, হঠাৎ ঘোষণায় তাঁরা লঞ্চ চালানোর জন্য প্রস্তুত নন। তাই একটি লঞ্চও যাত্রী পরিবহন করবে না।
রাতে বরিশাল নৌবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, নৌবন্দরে ঢাকা রুটের নয়টি লঞ্চ রয়েছে। সব কটি লঞ্চের প্রবেশপথ আটকে রাখা হয়েছে। পন্টুনে কয়েক শ যাত্রী উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু কোনো লঞ্চ ছাড়েনি।
অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের পরিদর্শক সেলিম মাহমুদ বলেন, শনিবার রাত ৮টায় তাঁরা জানতে পেরেছেন, রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ চলবে। কিন্তু বিধিনিষেধ থাকায় লঞ্চের বেশির ভাগ শ্রমিক ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছুটিতে আছেন। লঞ্চ চালানোর মতো শ্রমিক এবং কেবিন যাত্রী না থাকায় মালিকপক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি তাঁরা।
ঢাকা-বরিশাল রুটের সুরভী লঞ্চ কোম্পানির অন্যতম পরিচালক রিয়াজ উল কবির বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে লঞ্চ ছাড়ার জন্য ফোন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ। তাই অধিকাংশ শ্রমিক-মাস্টার ছুটিতে বাড়ি গেছেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাস্টার-চালক লঞ্চে নেই। দুজন মাস্টার ও দুজন চালক ছাড়া লঞ্চ চালানো যায় না।
লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মো. সাইদুর রহমান বলেন, সরকার যখন এই ঘোষণা দিয়েছে, তখন বরিশাল নদীবন্দর যাত্রীশূন্য। তা ছাড়া লঞ্চের অনেক শ্রমিক-কর্মচারীও বাড়ি গেছেন। সরকারি ঘোষণাটা বিকেলে হলেও মাইকিং করে দেওয়া যেত। তাহলে কিছু যাত্রী পাওয়া যেত। যাত্রী নেই, কর্মচারীরাও নেই। তাই বরিশাল নদীবন্দর থেকে লঞ্চ ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা নিতে পারেননি।
এদিকে আজ রোববার সড়ক ও নৌপথে যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। বরিশাল নৌবন্দরে কিছু যাত্রী আছে। লঞ্চ ছাড়বে, এ ঘোষণার পর তাঁরা নৌবন্দরে আসেন। কিন্তু লঞ্চ না ছাড়ার খবর শুনে তাঁরা হতাশ হন। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁদের আশ্বস্ত করেন যে বরগুনা থেকে দুটি লঞ্চ সকাল ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছে। সেই লঞ্চে তাঁদের ঢাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যাবে না। আর যাত্রী কম। তবে বরগুনা থেকে রাজারহাট, অভিযান-১০ নামে দুটি লঞ্চ ছেড়ে আসছে। লঞ্চ দুটির বরিশাল নৌবন্দরে ঘাট দেওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বরিশাল নৌবন্দরে ঘাট দিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।