বরিশাল বিভাগে করোনাকালেও এগিয়ে কৃষি

দুই লাখ টন অতিরিক্ত চাল উৎপাদনের সফলতার পর এবার বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমি আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ।

বিশ্বজুড়ে বৈরী আবহাওয়া ও নানা সংকটের কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শস্য চাল, গম ও ভুট্টার উৎপাদন কমছে। করোনাকালে বিশ্বে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা থাকলেও উল্টো চিত্র বাংলাদেশে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে এবার আমন, আউশ-বোরো মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে, যা গত মৌসুমের চেয়ে ২ লাখ টন বেশি। রবি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ কোটি টাকা প্রণোদনাও বরাদ্দ করা হয়েছে।

বিভাগীয় কৃষি বিভাগ বলছে, এবার ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রবি ফসল বিশেষ করে বোরো, গম, গোল আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, শীতকালীন সবজি, তেলবীজ, মসলা, ডাল জাতীয় ফসল এবং তরমুজ ও সয়াবিন চাষাবাদের জন্য লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫১৬ হেক্টরে বোরো আবাদের মাধ্যমে ৬ লাখ টনের বেশি চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।

সূত্র জানায়, এবার রবি মৌসুমে ৫২ হাজার হেক্টরে শীতকালীন শাকসবজি, ৩৫ হাজার হেক্টরে তরমুজ, ৭ হাজার হেক্টরে গম, ১৩ হাজার ৫১ হেক্টরে মিষ্টি আলু, ৯ হাজার ৫১ হেক্টরে গোল আলু, ১০ হাজার ১৭৫ হেক্টরে ভুট্টা, আড়াই হাজার হেক্টরে আখ, ৬ হাজার ১২৯ হেক্টরে শসা, ক্ষীরা, ১ হাজার ৩৮৪ হেক্টরে ফুট আবাদের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন ধরনের তেল জাতীয় ফসল আবাদের লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে ২৩ হাজার হেক্টরে চিনাবাদাম, ১৩ হাজার হেক্টরে শর্ষে, ৪ হাজার ২১২ হেক্টরে সূর্যমুখী, ২ হাজার ৪৫৩ হেক্টরে তিল ও প্রায় ১২৫ হেক্টরে তিসি, প্রায় ২৪ হাজার হেক্টরে সয়াবিন, প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে ডাল জাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ থেকে প্রকাশ করা বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও খাদ্য উৎপাদন কেমন হতে পারে বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। বৈশ্বিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন-২০২০, মে শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে চালের উৎপাদন দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল উৎপাদনকারী দেশ চীনের উৎপাদন ১ দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে। বিশ্বের অন্যতম চাল রপ্তানিকারক দেশ থাইল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ, মিয়ানমারে প্রায় ২ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। ভারত ও ভিয়েতনামে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি চালের উৎপাদন বেড়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে, প্রায় ৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে চাল, গম ও ভুট্টা—এই তিন শস্যের মোট উৎপাদন প্রায় ১০ লাখ টন বৃদ্ধির আভাস দিয়েছিল।

কৃষি বিভাগ বলছে, গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’–এর পরে ভাদ্রের বড় অমাবস্যায় কয়েকটি লঘুচাপের প্রভাবে ফুঁসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর উজানের ঢলের সঙ্গে প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের ধারাবাহিক উচ্চ জোয়ারে উঠতি আউশের পাশাপাশি আমন বীজতলা ও রোপা আমনেরও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎপাদনে তার প্রভাব পড়েনি। পাশাপাশি গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও পুনরায় প্রবল বর্ষণে আগাম রবি ফসলসহ আমনেরও কিছু ক্ষতি হয়।

এরই মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে আমনের জমিতে থোড় ও ফুল আসতে শুরু করেছে। সপ্তাহ দুয়েক পরই আমন কাটা শুরু হবে। চলবে পৌষের শেষ ভাগ পর্যন্ত। এরই মধ্যে কৃষকেরা বোরোর বীজতলা তৈরির কাজও শুরু করেছেন। অন্যান্য রবি ফসল আবাদও শুরু করেছেন অনেকে। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় অতিক্রম করে দক্ষিণাঞ্চলে এবার ৬ লাখ ১৫ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ১৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। পাশাপাশি আউশ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টনের বেশি।

বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল বিভাগে মোট আবাদি জমি ৮ লাখ ২ হাজার হেক্টর। এর ৯৩ ভাগ জমি এবার বোরো আবাদের আওতায় আনা হবে। গতবার তা ছিল ৮২ ভাগ। এবার এ জন্য কৃষকদের সার, বীজ ও অন্যান্য সহায়তা বাবদ ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। এ টাকা কৃষকদের মাঝে বিতরণের প্রস্তুতি চলছে।