বরিশাল বিভাগে মোট শনাক্তের ৭৪ দশমিক ১৯ শতাংশই শেষ তিন মাসে
বরিশাল বিভাগে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ৮২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ দশমিক ১৯ শতাংশই শনাক্ত হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর মে থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত প্রায় তিন মাসে। এ সংখ্যা ২২ হাজার ৬৮৪। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে করোনার সংক্রমণের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশাল বিভাগে করোনার প্রথম ঢেউ শুরু হয় গত বছরের ৯ এপ্রিল। প্রথম ঢেউয়ের সময় বিভাগে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৪৩ জন শনাক্ত হয়েছিলেন গত বছরের জুনে। এবার মে মাসে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ৭ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ ৬২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এরপর ১১ জুলাই তা ৭১০, ১৩ জুলাই ৮৭৯ ও ১৯ জুলাই তা আরও বেড়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা ৮৯১। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮২২ জনের করোনা শনাক্তের মধ্য দিয়ে বিভাগে এ পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৫৭৪।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মে মাসে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর সংক্রমণ ভয়াবহ হয়ে ওঠে জুলাই মাসের শুরু থেকে, যা এখনো অব্যাহত আছে। মে মাসে বিভাগে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৪৪ রোগী। জুনে শনাক্ত ৮ গুণ বেড়ে হয় ৮ হাজার ৯৫২ এবং জুলাইেয়র ২৭ দিনে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৮৮ জনে। বিভাগের ৬ জেলার বরিশালে শনাক্ত সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৯৭৭ জন। এরপরে পিরোজপুরে ৪ হাজার ১৪১, ঝালকাঠিতে ৩ হাজার ৭৭৩, বরগুনায় ২ হাজার ৬৭৪ ও ভোলায় ৩ হাজার ২২৬ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
বেড়েছে মৃত্যুহার
আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভাগে করোনায় মারা গেছেন ৪৩৭ জন। তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর মে থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৬৯ জনের, যা মোট মৃত্যুর ৩৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া কেবল বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আজ পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৭৪৫ জন। করোনায় সবচেয়ে বেশি ১৪৯ রোগী বরিশালে মারা গেছেন। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৩ জন মারা যান পটুয়াখালীতে। এ ছাড়া পিরোজপুরে ৬৮, বরগুনায় ৬৩ ও ঝালকাঠিতে ৫৪ জন করোনায় মারা গেছেন। বিভাগে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ হলেও সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার বরগুনায়, ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
সংক্রমণ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্বেগ বাড়ছে
দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর গত ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার দেশে কয়েক দফা বিধিনিষেধ আরোপ করলেও জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে এ বিভাগে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এরপর আরও কিছু বিষয় করোনার সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল করায় গণপরিবহন চালু হয়। এ কারণে বিপুলসংখ্যক লোক গ্রামে ফিরেছে। একই সঙ্গে কোরবানির পশুর হাটে ব্যাপক লোকসমাগমে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়। গ্রামে ফেরা লোকজনের বেশির ভাগই এখনো কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। তাঁরা পরিবার ও হাটবাজারে অবাধে চলাচল করছেন। ফলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আগেই উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং এ–সংক্রান্ত সতর্কতার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তা তেমন কাজে আসেনি। এসব কারণে করোনার শনাক্তের হার বেড়ে গেছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের পর সংক্রমণের উল্লম্ফন এ ধারণারই প্রতিফলন। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে, সেটা বুঝতে আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে। বরিশাল বিভাগে জুলাইয়ের প্রথম থেকেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়। ঈদে অনেক মানুষ গ্রামে ফিরেছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামে আছেন। এ জন্য উদ্বেগ এখন আরও বেশি। আমরা খবর পাচ্ছি, গ্রামে প্রচুর লোক জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে বড় একটি অংশ এখন গ্রামের। আমরা পরীক্ষার সুযোগ বাড়িয়েছি। প্রতিদিন তা বাড়ছে। তাই সামনের এক সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এখন একটাই বিকল্প আর তা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। সেটা না করতে পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।