বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে স্বামীসহ ছাত্রীকে লাঞ্ছিত, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে স্বামীসহ ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা সড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আবাসিক ছাত্রী তাঁর স্বামীকে নিয়ে ক্যাম্পাসের পাশে আনন্দবাজার এলাকায় ঘুরতে গেলে জাহিদ হোসেন ওরফে জয় হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা স্বামীসহ ওই ছাত্রীকে আটক করেন। পরে জাহিদের নেতৃত্বে ওই ছাত্রীর স্বামীকে মারধর করা হয়।
জাহিদ হোসেন সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইদুল আলম ওরফে লিটনের অনুসারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাহিদ হোসেন প্রায়ই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন।
ওই ছাত্রীর স্বামী বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই আনন্দবাজার এলাকায় ঘুরতে যান। এ সময় সাইদুলের অনুসারী জাহিদসহ কয়েকজন তাঁদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে জাহিদের লোকজন তাঁদের আটক করে লাঞ্ছিত করেন এবং তাঁকে মারধর করেন। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা এসে তাঁদের উদ্ধার করে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত সাড়ে নয়টার দিকে বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে নিয়ে মহাসড়ক থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শোনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
খোরশেদ আলম অভিযোগ করে বলেন, সাইদুল আলম জনপ্রতিনিধির মতো আচরণ করেননি বলে এমন ঘটনা ঘটেছে। লাঞ্ছিত ওই ছাত্রীকেও হলে পাঠানো হয়েছে। ওই ছাত্রীর স্বামীকে স্থানীয় বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর নিচের ইউপি সদস্য সাইদুল ও জাহিদ হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর চালান।
ঘটনার পর থেকে সাইদুল আলম ও জাহিদ হোসেন গা ঢাকা দিয়েছেন। তাই এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সাইদুলের বাবা বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কিছু লোক এসে প্রথমে জিজ্ঞাসা করে এটা সাইদুল মেম্বারের বাড়ি কি না। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য লাইট জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাঙচুর শুরু করে। আমি হাঁটতে-চলতে পারি না। দুই-তিন শ ছেলে এসে আমার ঘর ভাঙচুর করেছে। আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করেছে।’
জাহিদ হোসেনের মা জোছনা বেগম বলেন, তাঁর ছেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসে তাঁর ঘরবাড়ি ভেঙে লুটপাট করে নিয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন।
জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটনের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।