ফাঁকা জায়গায় পোড়ানো হচ্ছে চিকিৎসাবর্জ্য। বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পেছনে।
ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পেছনের ফাঁকা জায়গায় পোড়ানো হচ্ছে চিকিৎসা বর্জ্য। ফলে বর্জ্যের পোড়া গন্ধ ও ধোঁয়া ওই ওয়ার্ডের শিশু রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সাবেক সিভিল সার্জন ও বক্ষব্যাধি চিকিৎসক আবু মো. খয়রুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, এই বর্জ্যের পোড়া গন্ধে শিশুসহ সব বয়সের শ্বাসকষ্টের রোগীদের কষ্ট আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পেছনে কয়েক ফুট দূরে রয়েছে ‘ইনসিনারেটর’। ওপরে চিমনি থাকা এই বদ্ধ ঘরাকৃতির স্থাপনার ভেতরেই চিকিৎসা বর্জ্য ধ্বংস করার কথা। কিন্তু ইনসিনারেটরটি সচল নেই। সেটির আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে চিকিৎসা বর্জ্য। একপাশের কয়েকটি বর্জ্যের স্তূপে আগুন জ্বলছে। সেসব বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে উচ্ছিষ্ট খাবার, রক্তের ব্যাগ, গজ, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, স্যালাইনের ব্যাগ, বিভিন্ন ওষুধের খোসা, গ্লাভস, পানির বোতল, প্লাস্টিকের বাটি, মাস্ক, টিস্যু, পলিথিন, ওয়ান টাইম প্যাকেটসহ বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী। বর্জ্যের পোড়া গন্ধ ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। পোড়ানোর জায়গাটা থেকে শিশু ওয়ার্ডের দূরত্ব ২০ মিটারের কম।

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর গ্রাম থেকে এসেছেন কৃষক শহিদুল ইসলাম (৩৯)। তাঁর ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। চার দিন ধরে হাসপাতালে আছেন। সকালে যখন চিকিৎসা বর্জ্য পোড়ানো শুরু হয়, তখন হাসপাতালের শিশু বিভাগের আশপাশে টিকতে পারেন না শহিদুল। অন্য কোনো দিকে সরে গিয়ে পোড়া গন্ধ ও ধোঁয়া থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর গ্রামের জয়ন্তী রায়ের (৪১) শিশুসন্তান শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যাচ্ছিল শিশুটির। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে শিশু ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়েছেন জয়ন্তী।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাকিবুল আলম বলেন, হাসপাতালের বর্জ্য খোলা জায়গায় পোড়ানো মোটেই ঠিক নয়। এসব বর্জ্য ইনসিনারেটরে পোড়ানোর নিয়ম। কিন্তু ইনসিনারেটর দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষও সেভাবে বর্জ্য অপসারণ করছে না। এতে বাধ্য হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাধারণ বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার সচিব রাশেদুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা কখনোই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা বর্জ্য অপসরণ করে না। তারা কেবল হাসপাতালের সাধারণ বর্জ্য অপসারণ করে থাকে। কিন্তু এখন বর্জ্য ফেলার জায়গার সংকটের কারণে সাধারণ বর্জ্যও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।