বর্জ্য ফেলার স্থান এখন লোকজনের গলার কাঁটা

বর্জ্য ফেলার স্থানে দক্ষিণে পুরোটাই ও পশ্চিম দিকের কিছু অংশ ফাঁকা। এর ভেতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা।

ঝিনাইদহ জেলার মানচিত্র

ঝিনাইদহ পৌরসভার বর্জ্য ফেলার স্থানের আশপাশের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে রয়েছেন। উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। বর্জ্য ফেলার স্থানটি ওই এলাকার বাসিন্দাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্জ্য ফেলার স্থান সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী লোকজন।

ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক সড়কের পাশে জাড়গ্রাম এলাকায় বর্জ্য ফেলার স্থানটির অবস্থান। পৌরসভার সীমানা থেকে এর দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। ১৯৫৮ সালে ঝিনাইদহ পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয়। পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬-৬৭ সালে ময়লা ফেলার জন্য ওই স্থান নির্ধারণ করা হয়। সেখানে ৬ একর ৬৩ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তখন থেকে সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে।

দুগন্ধে গ্রামে যাওয়ায় কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। তখন এ পথ ব্যবহার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আনিচুর রহমান, জাড়গ্রামের বাসিন্দা

জাড়গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, একসময় গ্রামের বসতবাড়ি অনেক ভেতরে ছিল। তখন গ্রামের রাস্তা কাঁচা ছিল। কিছুটা দূর দিয়ে চলে যাওয়া ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ধারে চাষাবাদ হতো। গোটা এলাকা একটি মাঠ ছিল। যাঁরা গ্রামে বসবাস করতেন, তাঁরা শহরমুখী ছিলেন না। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বসতবাড়ি ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ধার পর্যন্ত চলে এসেছে। পৌরসভার বর্জ্য ফেলার স্থানের পাশেও এখন বসতবাড়ি রয়েছে।

বর্জ্য ফেলার স্থানে উত্তর ও পূর্ব দিকে প্রাচীর দেওয়া। দক্ষিণে পুরোটাই ও পশ্চিম দিকের কিছু অংশ ফাঁকা। এর ভেতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা, যা জাড়গ্রামে যাওয়ার একমাত্র পথ। সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় সবাইকে নাকে চেপে রাখতে হয়।

জাড়গ্রামের আরেক বাসিন্দা আনিচুর রহমান বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ বর্তমানে যে স্থানে ময়লা ফেলছে, এটা কোনো নির্জন এলাকা বা মাঠ নয়। এটা এখন জনবসতিপূর্ণ একটি এলাকা। তাঁদের গ্রামের অনেকে রাস্তার ধারে বাসাবাড়ি করেছেন। যাঁরা এ এলাকায় বসবাস করছেন, তাঁরা কষ্ট পাচ্ছেন। উন্মুক্ত স্থানে মানববর্জ্যও ফেলা হচ্ছে। এ কারণে তাঁদের গ্রামে যাওয়ায় কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। তখন এ পথ ব্যবহার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বর্জ্য ফেলার ওই স্থানের সীমানা ঘেঁষে রয়েছে বিনোদনকেন্দ্র জোহান ড্রিম ভ্যালি অ্যান্ড রিসোর্ট। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ময়লা ফেলার স্থানটি এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। পৌরসভার উচিত এটি সরিয়ে নেওয়া। এ ক্ষেত্রে তারা নির্জন কোনো এলাকা বা মাঠ বেছে নিতে পারে। তাঁরাও এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।

সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ঝিনাইদহ পৌরসভায় নির্বাচন হয়নি। বর্তমানে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক। বর্জ্য ফেলার স্থান নিয়ে ভোগান্তির বিষয়ে পৌরসভার প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, যে সময়ে ওই স্থানে বর্জ্য ফেলার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন স্থানটি মাঠ ছিল। পরে বসতি গড়ে উঠেছে। গন্ধ যেন না ছড়ায়, সে জন্য মাঝেমধ্যে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে থাকেন। স্থানটি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো পরিকল্পনা করেনি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশীদ বলেন, জনসাধারণের বিষয়টি আগে দেখতে হবে। এ কারণে বর্জ্য ফেলার স্থান সরিয়ে নিলে ভালো হয়। তা ছাড়া বিকল্প কিছু করা যায় কি না, সেটাও দেখা যেতে পারে।