বাগেরহাটে তিন মাসে করোনায় মৃত্যু শতাধিক
বাগেরহাটে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন একজন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩০-এ। এর মধ্যে গত তিন মাসে মৃত্যু হয় ১০৪ জনের।
রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বাগেরহাট জেলায় মোট ২৬০ জন করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এর মধ্যে ৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সেই হিসাবে শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১ শতাংশ।
দেড় মাস আগেও জেলায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ৫০ শতাংশের ওপরে। মূলত গত মে-জুন থেকে জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই সময়ে বেশ কয়েকটি উপজেলায় শনাক্তের হার ছিল ৭২ থেকে ৭৩ শতাংশ। আর সারা জেলায় শনাক্তের গড় হার ছিল ৫৬ শতাংশ।
আক্রান্ত রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে মৃত্যুও। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে, গত তিন মাসে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৪ জন। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশেরই করোনার টিকা দেওয়া ছিল না।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, করোনায় মারা যাওয়া ও এর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৯৫ জন রোগীর ভ্যাকসিন নেওয়া ছিল না। এ কারণে তাঁদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। আর যাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া ছিল, তাঁরা অল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ে জেলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ গত তিন মাসেই মৃত্যু হয়েছে ১০৪ জনের। যাঁরা ভ্যাকসিন নেননি, তাঁদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি ছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত দুই মাসে বাগেরহাটে করোনাভাইরাসে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও অন্তত ৬০ জন। গত দুই মাসে ৫০ শয্যার করোনা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চাপও অনেক বেড়ে যায়, এ সময় ৫০ শয্যার বিপরীতে প্রায় ৭০ জনের মতো রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে কোভিড হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে ৭০টি করা হয়।
তবে করোনার সংক্রমণের হার অনেকটাই কমে এসেছে। তিন সপ্তাহ ধরে বাগেরহাটে করোনা শনাক্তের হার ২৩ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে, যা আগে ৫৬ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে এই হারও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি উল্লেখ করে করোনার সংক্রমণ রোধে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন হুমায়ুন কবির বলেন, বাগেরহাটে সব উপজেলায় নিয়মিত করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত জেলার ৪২ হাজার মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আর প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৯৮ হাজার ৭২৫ জনকে। শহরের তুলনায় গ্রামের বয়স্করা টিকা নিয়েছেন কম। তাঁদের কথা চিন্তা করে সরকার গ্রামের মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে কার্যক্রম শুরু করেছে।
শনিবার জেলার ৭৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এক দিনে ৮১টি কেন্দ্রে ৪৪ হাজার ৪৬৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
রোববার পর্যন্ত বাগেরহাটে ৬ হাজার ৩২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৪৮১ জন সুস্থ হয়েছেন। আর আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩০ জন। তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু কয়েক গুণ বেশি।