বাঘ নেই, দর্শনার্থী কম

করোনার আগে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় আসতেন। এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০০ জন আসেন।

রংপুর চিড়িয়াখানায় নেই বাঘ। বাঘের খাঁচা ফাঁকা। গত সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

করোনার বিধিনিষেধ কাটিয়ে আবার বিনোদনকেন্দ্রগুলো জমে উঠেতে শুরু করেছে। কিন্তু রংপুর চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের আনাগোনা তেমন একটা বাড়েনি। দর্শনার্থীরা বলছেন, এ চিড়িয়াখানায় নতুন কোনো প্রাণী অনেক দিন ধরে আনা হয় না। বাঘ, জিরাফসহ বিভিন্ন প্রাণীর খাঁচা ফাঁকা পড়ে আছে। চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারের ইজারাদার বলেন, দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় তাঁর ইজারার টাকাও ঠিকমতো উঠছে না।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানায় কিছু দর্শনার্থী ঘুরছেন। শিশু-কিশোরেরা তাদের মা-বাবা ও স্বজনদের হাত ধরে এ খাঁচা থেকে ওই খাঁচা ঘুরে ঘুরে দেখছে। তরুণ আর কিশোরেরা দল বেঁধে ঘুরছে। তাদের কয়েকজন বলেছে, তারা সময় কাটাতে চিড়িয়াখানায় এসেছে। পশুপাখি দেখতে নয়।

রংপুর নগরের মেডিকেল পূর্ব গেট এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী রোকেয়া আক্তার তাঁর দুই সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে এসেছেন। তিনি বললেন, ‘বইয়ের মধ্যে পশুপাখির ছবি দেখতে দেখতে সন্তান বাঘ, জেব্রা, জিরাফ দেখার বায়না ধরে। তাই চিড়িয়াখানায় আসা। কিন্তু এখানে এসে এসব প্রাণী না দেখতে পাওয়ায় ছেলে আর থাকতে চাচ্ছে না।’

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, দেশের দুটি সরকারি চিড়িয়াখানার মধ্যে রংপুরে একটি। ১৯৮৯ সালে রংপুর চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে খুলে দেওয়া হয়। রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র পুলিশ লাইনস স্কুল ও কলেজের সামনে হনুমানতলা এলাকায় প্রায় ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানা। এখানে বর্তমানে সিংহ, গন্ধগোকুল, শকুন, চিল, বাজপাখি, চিত্রা হরিণ, জলহস্তী, খরগোশ, শজারু, গাধা, হনুমান, বানর, ভালুক, ময়ূর, ঘোড়া, কুমির, অজগর, ইমু, উটপাখিসহ ৩২ প্রজাতির ২৫৯টি প্রাণী রয়েছে। তবে এসব প্রাণীর বেশির ভাগই বয়স্ক, কোনোটির আবার জোড়া নেই। এর মধ্যে ইমু পাখি, উটপাখি, ভালুক, হনুমান ও শজারু দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীহীন অবস্থায় রয়েছে। একমাত্র বাঘিনী গত ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যায়। ফলে বাঘশূন্য এখন খাঁচা। নতুন করে বাঘ আনার কোনো উদ্যোগ নেই।

সূত্রটি আরও জানায়, প্রায় ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চার বছর আগে জিরাফের জন্য একটি খাঁচা তৈরি করা হলেও সেখানে জিরাফ আনা হয়নি। চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার পর প্রাণীদের খাঁচাগুলো নামমাত্র সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে অনেক খাঁচা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম থেকে রংপুরে বেড়াতে এসেছেন স্কুলশিক্ষক শাহনাজ বেগম। তিনি বলেন, ‘অনেক প্রাণী দেখার ইচ্ছা থাকলেও এখানে এসে হতাশ হতে হলো। কেননা দেখার মতো অনেক উল্লেখযোগ্য প্রাণী এখানে নেই। চিড়িয়াখানায় এসে যদি এসব প্রাণী দেখতে পাওয়া না যায়, তাহলে কেন এত বড় এলাকা নিয়ে চিড়িয়াখানা হলো?’

মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা রুমানা আক্তার বলেন, এখানে পাখির সংখ্যাই বেশি। পর্যাপ্ত প্রাণী না থাকায় চিড়িয়াখানায় আসার ইচ্ছা হয় না। এরপরও সন্তানদের বিনোদন দিতে, ঘুরতে-ফিরতে পশুপাখি দেখতে এখানে ছুটে আসা।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সূত্র আরও জানায়, প্রতিবছর এ চিড়িয়াখানার বিভিন্ন খাতের ইজারা থেকে সরকার প্রায় ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করছে। এর মধ্যে দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য গেট থেকে ৩৯ লাখ টাকা আয় হয়। চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারের ইজারাদার হযরত আলী বলেন, করোনার আগে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় আসতেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এরপর খুলে দেওয়া হলেও দর্শনার্থী আর আগের মতো আসে না। এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০০ জন আসেন। দর্শনার্থী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্রাণিসংকট। দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করার মতো উল্লেখযোগ্য প্রাণী নেই। তাই ইজারার টাকা ওঠা নিয়েও তাঁর চিন্তিত থাকতে হচ্ছে।

রংপুর সরকারি বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর আমবার আলী তালুকদার বলেন, চিড়িয়াখানায় প্রাণিসংকট রয়েছে। অনেকের সঙ্গী নেই। জেব্রা, জিরাফ, বাঘসহ কয়েক প্রকার পশুপাখির চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে। আশা করছে দ্রুত চাহিদা পূরণ হবে।