বাম জোটের হরতালের মধ্যেই বগুড়ায় যানজট

বগুড়ার সাতমাথা মোড়ের এক পাশে হরতালের সমর্থনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, অন্য পাশের সড়কগুলোতে তখন প্রচণ্ড যানজটে নাকাল সাধারণ মানুষছবি: প্রথম আলো

আজ সোমবার বেলা সোয়া ১১টা। বগুড়া শহরের ব্যস্ততম সড়ক সাতমাথায় মুজিব মঞ্চের সামনে চলছিল একটি সমাবেশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ডাকা আধা বেলা হরতালের সমর্থনে এই সমাবেশের আয়োজক বাম গণতান্ত্রিক জোটের বগুড়া জেলা শাখা।

সাতমাথার এক পাশে হরতালের সমর্থনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, অন্য পাশে শেরপুর সড়ক, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক ও স্টেশন সড়কে তখন প্রচণ্ড যানজটে নাকাল অবস্থা মানুষের। যানবাহনের দীর্ঘ সারিতে আটকে ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, বাস। সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের সড়কে লেগে থাকা এই যানজটে নাকাল অবস্থা ছিল মানুষের।

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানোর তৎপরতা বন্ধ, গণবণ্টনব্যবস্থা চালু, শহর গ্রামের গরিব মানুষের মধ্যে রেশনিং কার্যক্রম, পর্যাপ্ত টিসিবির দোকান চালুর দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আজ সোমবার সারা দেশে আধা বেলা হরতাল পালন করে। তবে দেশের অন্যান্য শহরের মতো বগুড়াতেও হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। সড়কে যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। ব্যাংক–বিমায় স্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। অফিস–আদালতেও ছিল স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড।

বাম জোটভুক্ত দলগুলোর নেতা–কর্মীরা আজ সকাল থেকেই বগুড়া শহরের সাতমাথায় সরব ছিলেন। হরতালের সমর্থনে তাঁরা মিছিল সমাবেশ করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে হরতালে নৈতিক সমর্থন জানানো হলেও দলটির কোনো নেতা–কর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের সাতমাথায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাতুল ইসলাম। সভায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা ও বাসদ বগুড়া জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, বাসদ বগুড়া জেলা কমিটির সদস্যসচিব সাইফুজ্জামান টুটুল, গণসংহতি আন্দোলনের বগুড়া জেলা সমন্বয়ক আবদুর রশিদ, সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার পাল, ট্রেড ইউনিয়ন কাউন্সিল বগুড়া জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি দিলরুবা নূরী, ক্ষেতমজুর নেতা শহিদুল ইসলাম, ছাত্রনেতা শ্যামল বর্মন, শ্রমিকনেতা আবদুল কুদ্দুস, যুবনেতা সুলতান আহমেদ, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সাদ্দাম হোসেন, ধনঞ্জয় বর্মন, নিয়তি সরকার, যুব ইউনিয়নের নেতা শাহনিয়াজ কবির খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

হরতালের মধ্যেও যানজট হওয়ার বিষয়ে সমাবেশে বাসদ জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়ি ভাঙলেই হরতাল হয় না। জ্বালাও, পোড়াও, ভাঙচুর করাকে হরতাল বলে না। হরতাল গণতান্ত্রিক কর্মসূচি। বাম গণতান্ত্রিক জোট শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের উদহারণ তৈরি করতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ’সকালে এক রিকশাচালককে জিজ্ঞেস করেছিলাম হরতালে বের হয়েছেন কেন? তিনি বললেন, পেটের দায়ে। তিনি নিশ্চিত ছিলেন,বাম গণতান্ত্রিক জোটের হরতালে কেউ রিকশা ভাঙে না। দোকান ভাঙে না।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ বলেন, ‘রাষ্ট্রের মালিক এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমলা। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যাঁরা চাকর, তাঁরাই মালিক বনে গেছেন। তারা রেশন পায়। অথচ রাষ্ট্রের মালিক দরিদ্র জনগণ। এই দরিদ্ররা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখী বাজারে রেশন পান না। ঠিক মতো খেতে পান না। পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। রাষ্ট্রের সেবকদের রেশন নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠী রেশন পাবেন কবে?’