ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় কৃষিজমি কেটে পুকুর বানিয়ে সেখান থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সরকারদলীয় কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জানান তাঁরা।
স্থানীয় লোকজন ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের দাড়িয়াপুর, ভোটাংবাড়ি, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, লতিফপুর এলাকায় কৃষিজমির মাটি কেটে বালু উত্তোলন করতে অন্তত ১০টি পুকুর কাটা হয়েছে। আনুমানিক সাড়ে ২৬ বিঘা কৃষিজমি এভাবে কাটা হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়পুর ইউনিয়নের দাড়িয়াপুরে সাড়ে আট বিঘা কৃষিজমির মধ্যে পাঁচটি পুকুর, ভোটাংবাড়ি এলাকায় সাড়ে আট বিঘা কৃষিজমির মধ্যে তিনটি পুকুর, ধোরানালে সাত বিঘার বেশি জমিতে একটি পুকুর, চানপুর এলাকার লতিফপুর রেলগেটসংলগ্ন এলাকায় আড়াই বিঘা কৃষিজমিতে একটি পুকুর কেটে খননযন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলনে পাশের কৃষিজমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাশের জমিতে পানি আটকে রাখা যাচ্ছে না।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ৫(১) ধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি দাড়িয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল ওয়াদুদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ইউএনও কে এম ইয়াছির আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেব।’
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দেড় মাস ধরে নিদারাবাদ মৌজার দক্ষিণপাড়ায় প্রবাসী হাবিবউল্লাহর জমিতে ৫০-৬০ ফুট গভীর গর্ত করে খননযন্ত্রের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে খুব সহজেই পাশের আবদুল ওয়াদুদের ৬০ শতক কৃষিজমি ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। জমিতে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। ব্যাপকভাবে বালু উত্তোলনের কারণে জমির অনেক অংশ পাশের লোহর নদে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বালু উত্তোলন বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
জমির মালিক হাবিবউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জমির দুই পাশের কৃষিজমির মালিকেরা পুকুর করতে নিজের জমির মাটি কেটে বালু তুলছেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই তিনিও একই কাজ শুরু করেছেন। তাঁর জমি থেকে বালু তুলছেন বালু ব্যবসায়ী রুহুল আমিন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন, ভোটাংবাড়ি এলাকায় বদরুল আলমসহ কয়েকজন বালু উত্তোলন করে আসছেন। দাড়িয়াপুর, ভোটাংবাড়ি ও লতিফপুর রেলগেটসংলগ্ন এলাকার কৃষিজমি থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে এবং ধোরানাল এলাকায় কয়েক মাস আগে বালু উত্তোলন করা হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দাড়িয়াপুর দক্ষিণপাড়ার হাবিবুল্লাহর জমি থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন শ্রমিকেরা। সেখান থেকে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বালু অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে।
বালু ব্যবসায়ী উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন এ বিষয়ে বলেন, ‘যেভাবে বালু তুলছি, এতে অন্যের কৃষিজমির কোনো ক্ষতি হবে না। আর উপজেলার বুল্লার এক ইউপি সদস্য, আমিসহ এমন আরও ১০ জন মেশিন দিয়ে বালু তুলছেন। বন্ধ করতে হলে সবারটা বন্ধ করতে হবে।’
বালু উত্তোলনকারী বদরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুকুর কাটতে বালু তোলা হচ্ছে। তবে বালু তোলার কোনো অনুমতি আমাদের কাছে নেই।’