বাহুবল থেকে ছয়টি পাতিসরালির ছানা উদ্ধার
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার একটি বাংলো থেকে ছয়টি পাতিসরালির ছানা উদ্ধার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার উপজেলার রশিদপুর গ্যাসফিল্ডের অতিথিদের বাংলো থেকে ছানাগুলো উদ্ধার করেন বন বিভাগ ও স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেনজারড ওয়াইল্ডলাইফ সংগঠনের সদস্যরা।
এর আগে গতকাল সোমবার বাংলোর পাশের একটি পানির গর্তে ছানাগুলো দেখতে পেয়ে বাংলোয় এনে রাখেন রশিদপুর গ্যাসফিল্ডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) গোলাম রব্বানী। পরে তিনি স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেনজারড ওয়াইল্ডলাইফের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছানাগুলো তাঁদের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় বন বিভাগের জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট মো. তাজুল ইসলাম, ফরেস্ট গার্ড সুব্রত সরকার, স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেনজারড ওয়াইল্ডলাইফের সমন্বয়ক খোকন থাউনৌজম, সোহেল শ্যাম উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, রশিদপুর গ্যাসফিল্ডের আশপাশে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রচুর পাখি বসবাস করে। গতকাল তিনি বাংলোর পাশে সরালি পাখির ছানা দেখতে পেয়ে সেগুলো বাংলোতে এনে রাখেন এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। ছানাগুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। গর্ত থেকে না উঠিয়ে আনলে সব মারা যেত।
ওয়াইল্ডলাইফের সমন্বয়ক খোকন থাউনৌজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে ছানাগুলো উদ্ধার করে আমাদের অস্থায়ী সেবাকেন্দ্রে বন বিভাগের পরামর্শ নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করছি। ছানাগুলো সুস্থ হয়ে একটু বড় হলে অবমুক্ত করা হবে।’
খোকন থাউনৌজম বলেন, পাতিসরালির বৈজ্ঞানিক নাম Dendrocygna javanica অর্থাৎ, জাভার বৃক্ষবাসী হাঁস। পাতিসরালি হাঁস এ দেশেরই পাখি। গ্রীষ্মে ছোট ছোট জলাশয়ে বাস করে এবং শীত এলেই হাওর-বাঁওড়, নদী-বিলে অস্থায়ীভাবে থাকে। শীত ছাড়া অন্য মৌসুমে ওরা ঝাঁক থেকে বের হয়ে নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে একক বা জোড়া হয়ে বিভিন্ন ছোট-বড় জলাশয়, ডোবা, বিল, হাওরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। একত্র না থাকার কারণে তাদের সংখ্যাটা ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে না।
খোকন থাউনৌজম আরও বলেন, বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় বাংলাদেশে পাখিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত ঘোষণা করেছে। তাদের খাবারের তালিকায় আছে ধানখেতের ছোট ছোট শামুক, জলজ উদ্ভিদ-শ্যাওলা, ছোট মাছ, জলজ পোকামাকড়। এপ্রিল-মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম। প্রজনন মৌসুমে এরা মূলত জলাশয়ের ধারে বড় গাছের কোটরে, নারকেলগাছে বাসা বাঁধে। ডিম দেয় ৭ থেকে ১১টি। ডিম ফুটে ২০ থেকে ২১ দিনে ছানা বের হয়।