মাগুরায় রাজনৈতিক সমাবেশ
বিএনপির ক্ষেত্রে শত বাধা
শনিবার সাউন্ডবক্স–মাইক নিয়ে সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ। পরদিন মাইক নিয়ে বিএনপি সমাবেশে নামলে পুলিশের বাধায় তা পণ্ড যায়।
মাগুরায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈষম্যমূলক আচরণ ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ১৪ মে ২০টি সাউন্ডবক্সের পাশাপাশি ৭০টি মাইকে ব্যাপক আয়োজনে ত্রিবার্ষিক সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ। অথচ পরদিন মাইক নিয়ে বিএনপি সমাবেশ শুরু করলে পুলিশের বাধায় তা পণ্ড যায়। তবে এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, আবাসিক এলাকায় বিএনপির ওই আয়োজনে মাইক ব্যবহারের অনুমতি ছিল না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচির দুই দিনেই সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করা হয় শহরের কেশব মোড়ের মৌসুমী সাউন্ড থেকে। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আকিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে নোমানী ময়দানে সমাবেশস্থলে ছোট–বড় ২০টি সাউন্ডবক্স স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি নোমানী ময়দান থেকে শহরের কেশব মোড়, সরকারি কলেজ, সদর থানা, পূর্বাশা সিনেমা হল, পারনান্দুয়ালী শেখ কামাল সেতু ও নিজ নান্দুয়ালী সেতু পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ৭০টির মতো মাইক স্থাপন করা হয়। আর সম্মেলন উপলক্ষে শহরে প্রচার মাইক বেজেছে টানা পাঁচ দিন।
পরদিন ১৫ মে জেলা শহরের ইসলামপুরপাড়ায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ উপলক্ষেও এই প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনটি মাইক ভাড়া করেছিলেন নেতা–কর্মীরা। এ বিষয়ে আকিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই দিন সকালে বিএনপির সমাবেশে তিনটি মাইক দিয়েছিলাম। তবে পুলিশের এক কর্মকর্তা ফোন করলে সেগুলো খুলে নিয়ে চলে আসি। পরে শুনেছি একটা মাইক তাঁরা (বিএনপি নেতারা) কোথা থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।’
মাগুরা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কখনোই নির্বিঘ্নে সভা–সমাবেশ করতে পারেননি তাঁরা। ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচির বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত বা স্থানীয় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটার অনুমতি চেয়েও পাওয়া যায় না। অনুমতি দিলেও উন্মুক্ত স্থানের বদলে ঘরোয়া পরিবেশে মাইক ব্যবহার না করে সমাবেশ করতে বলা হয়।
জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, কখনো কখনো সমাবেশের উপস্থিতির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেয় প্রশাসন। কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ নেতা–কর্মীদের ধরপাকড় করে, রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি–ধমকি দেওয়া হয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। অথচ ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে উল্টো আচরণ করে প্রশাসন। সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে সরকারি স্থাপনা ব্যবহারের পাশাপাশি প্রশাসনের কাছ থেকে নানা রকম সুযোগ–সুবিধা পেয়ে থাকেন ক্ষমতাসীনেরা।
মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ মে তাঁদের বিক্ষোভ সমাবেশে স্থানীয় নেতারা হ্যান্ড মাইকেই বক্তব্য দিয়েছেন। শুধু প্রধান অতিথির বক্তব্যের সময় একটা মাইক ব্যবহার করতে গেলে পুলিশ হামলা চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। বক্তব্য না দিয়েই ফিরে যান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক। অথচ এক দিন আগে সারা শহরে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে দিনভর মাইক বাজাল। তখন আবাসিক এলাকা চোখে পড়েনি পুলিশের।
সমাবেশে বাধা, অনুমতি না দেওয়া ও নেতা–কর্মীদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নেতাদের অভিযোগ বাস্তবসম্মত নয়। প্রথমত, সভা–সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার পুলিশের না। এটা জেলা প্রশাসনের কাজ। ফলে এখানে পুলিশের বাধা দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগও সত্য নয়। সবশেষ সমাবেশে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মাইক বাজাবে না। আবাসিক এলাকায় আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে পুলিশ মাইক বাজাতে বাধা দেয়। এটা নিয়ে তাদের (বিএনপির) নিজেদের উপদলের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশ উল্টো আহত হয়।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক সমাবেশ করতে অন্য দলেরও কি পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয় বা কোনো বাধা আসে? এমন প্রশ্নে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ফ ম আবদুল ফাত্তাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি দলের পারমিশনের অপেক্ষায় থাকতে হয় না। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানাই। তবে অনুমতির অপেক্ষায় থাকি না।’ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) মাগুরা জেলা আহ্বায়ক শম্পা বসু প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে প্রশাসনকে অবহিত করার রীতি রয়েছে। তবে অনুমতি নেওয়ার প্রশ্ন কেন আসবে?
মাগুরার জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভা–সমাবেশ করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুমতি নেওয়ার আইন রয়েছে। আওয়ামী লীগ যে সম্মেলন আয়োজন করেছে, তার এক মাস আগে আমাদের জানিয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা গত দুই বছরে একবারই আমার কার্যালয়ে এসেছিল সভা–সমাবেশ ইস্যুতে। সেটা করোনার সময়ে। এরপর তারা মৌখিকভাবেও কখনো জানায়নি। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, সবার জন্যই সমান সুযোগ।’