‘বিগ বস’ অনলাইনে, দাম হাঁকাচ্ছে ১৫ লাখ
সাদাকালো ষাঁড়টির নাম ‘বিগ বস’। ওজন ৩০ মণ। বয়স চার বছর ছয় মাস। বিক্রেতা অনলাইনে দাম হাঁকাচ্ছেন ১৫ লাখ টাকা। একই বিক্রেতার আরেকটি ষাঁড়ের ওজন সাড়ে ১৯ মণ। বয়স পৌনে তিন বছর। নাম ‘জুনিয়র বস ’। দাম হাঁকানো হয় আট লাখ টাকা।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের দশবাহা গ্রামের মাউন্ট অ্যাগ্রো ফার্মে রয়েছে ষাঁড় দুটি। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে করোনাকালে অনলাইনে ষাঁড় দুটি বিক্রির জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ফার্মের মালিক শাহজাহান সাজু চৌধুরী। শুধু শাহজাহান সাজু নন, কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকার অন্তত শতাধিক তরুণ ও যুবক করোনাকালে তাঁদের ফার্মে পালন করা কোরবানির পশু বিক্রি করছেন। ব্যাপক সাড়াও মিলছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও ১৭টি উপজেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাটবাজারে গিয়ে গরু কেনাবেচাকে নিরুৎসাহিত করে আসছে। এ জন্য গত বছর থেকে মুঠোফোন অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ঘরে বসে কোরবানির পশু কেনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত বছর ওয়েবসাইটে বিপুলসংখ্যক গরু কেনাবেচার কারণে এখানকার তরুণ ও যুবকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ে। গত এক বছর অন্তত শতাধিক তরুণ দেশীয় গরু কিনে নিজেদের ফার্মে মোটাতাজা করছেন।
কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী চৌধুরী বাড়ির মিনা অ্যাগ্রো ফার্ম, আদর্শ সদর উপজেলার জেডএইচ অ্যাগ্রো পার্ক, দাউদকান্দি উপজেলার মা ফরিদা ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রোভেট খামার, কুমিল্লা নগরের অশোকতলা এলাকার প্রার্থনা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম লিমিটেড, সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজারখলা এলাকার নীলকমল খামারবাড়িসহ জেলার অন্তত শতাধিক খামার অনলাইনে পশু বিক্রি করছে।
সরেজমিনে নগরের অশোকতলা খান বাড়ির ভেতরে প্রার্থনা অ্যাগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, সারিবদ্ধভাবে কোরবানির পশু দাঁড়িয়ে আছে। বিভিন্ন বর্ণের ওই ষাঁড়ের মধ্যে লাল রঙের ষাঁড় বেশি।
কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরীর ফরিদ গ্রুপের পরিচালক ইউসুফ লিটন বলেন, ‘অশোকতলা এলাকার প্রার্থনা, শওকত, চান্দিনা ও দেবীদ্বার উপজেলার ধামতী এলাকার বিভিন্ন ফার্ম ঘুরেছি। প্রতিবছর আমাদের সাত-আটটি গরু কোরবানি দিতে হয়। তাই বিভিন্ন ফার্ম ঘুরতে গেছি।’
কুমিল্লা নগরের জানু মিয়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা মোফাজ্জল হক। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যে মার্কেটিং বিষয়ে বিবিএ ও এমবিএ করেন। এরপর দেশে ফিরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী চৌধুরী বাড়ি এলাকায় গরুর খামারে যুক্ত হন। এবার কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মোফাজ্জল হোসেন তাঁর মিনা অ্যাগ্রো ফার্মে অর্ধশতাধিক ষাঁড় গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। স্কেলে ওজন দিয়ে তিনি এই গরু বিক্রি করছেন। এ ফার্মের মালিক মোফাজ্জল হক বলেন, ‘অনলাইনে গরু বিক্রির পর আমরা বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।’
এক দশক আগে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের ধনুয়াখলা গ্রামে জেএইচ অ্যাগ্রো পার্ক গড়ে তোলেন দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা ৪১ বছরের জিয়াউল হক। তিনি বলেন, ‘আমার ৩৫টি গরুর মধ্যে বেশির ভাগই অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে।’
কুমিল্লা নগরের অশোতকলা এলাকার বাসিন্দা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থনা অ্যাগ্রোর মালিক শাহআলম খান বলেন, ‘গত বছর করোনাকালে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির খবরটি আমার মনে দাগ কাটে। এরপর আমি ২০টি গরু কিনে পালন করি। আমার ফার্মের পাঁচটি গরু বিক্রি হয়েছে। দাম নাগালের মধ্যে।’
নীলকমলের মালিক আলী মনসুর বলেন, ‘আমার খামারে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা দামের ষাঁড় আছে।’
মাউন্ট অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক শাহজাহান চৌধুরী সাজু বলেন, ‘আমার বাবার আমল থেকে খামার ছিল। ২০১০ সালে বিদেশ থেকে ফেরত আসার পর খামারে জড়িত হই। বিগ বস ও জুনিয়র বসের পেছনে কয়েক লাখ টাকা খরচ। এই দুটি ষাঁড় আমার পোষ মানা। মাংসের ওজন বেশি, দামও বেশি।’
জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ২ লাখ ৩৪ হাজার। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ফার্মে কোরবানি উপলক্ষে ষাঁড় পালন করা হয়। ওই ষাঁড়ই এখন বিক্রি হচ্ছে।
মেয়র মো. মনিরুল হক (সাক্কু) বলেন, করোনাকালে কুমিল্লা নগরের কোথাও সিটি করপোরেশন হাট বসায়নি। এখন মানুষ অনলাইনে গরু কিনে ফেলে। এতে ঝক্কি কম।