নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ
বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না তাঁদের
প্রায় আট মাসে সিআইডি তিন দফা তিতাস গ্যাসের প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে আবেদন করেও ওই আটজনের ব্যাপারে অনাপত্তি পায়নি।
নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৩৪ জন নিহত হন। সিআইডির তদন্ত ও সাক্ষ্য–প্রমাণে ওই ঘটনায় তিতাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবেহলা, গ্যাসলাইনের লিকেজ মেরামত ও সঠিকভাবে তদারকি না করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ লাইন স্থানান্তর না করার সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু সেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলে অনাপত্তি দিচ্ছে না তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। প্রায় আট মাসে সিআইডি তিন দফা তিতাস গ্যাসের প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে আবেদন করেও অনাপত্তি পায়নি। অনাপত্তি না পাওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারছে না সিআইডি। ফলে তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক বাবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের আগে অনাপত্তির জন্য তিতাস গ্যাসকে দুই দফা চিঠি দেওয়া হলেও তারা জবাব দেয়নি। অনাপত্তি অনুমোদন না দেওয়ায় তদন্তকাজ নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না জানালেও সংস্থাটির জবাব মেলেনি। অভিযোগপত্র দাখিলের পর আদালতের আদেশ পেয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য আবার চিঠি দিলেও জবাব দেয়নি তিতাস।
২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে মুসল্লিসহ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসায় সুস্থ হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ নভেম্বর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি দেন মামলার তদন্তকারী সিআইডির পরিদর্শক বাবুল হোসেন। একই সঙ্গে পৃথক আরেকটি চিঠি দেন সিআইডি নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের বিশেষ সহকারী পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ। এর আগে ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ও ১৫ সেপ্টেম্বর আরও দুটি চিঠি দেয় সিআইডি। আদালতের আদেশের পর আরেক দফা তিতাসকে চিঠি দেয় সিআইডি। তারও জবাব দেয়নি তিতাস।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন তিতাস গ্যাস ফতুল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম, উপমহাব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, এস এম হাসান শাহরিয়ার, সিনিয়র সুপারভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ উন্নয়নকারী আইয়ুব আলী, প্রকর্মী ইসমাঈল প্রধান ও সাহায্যকারী হানিফ মিয়া।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে’ মামলা করে। ওই ঘটনায় তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, তিতাসের আট কর্মকর্তাসহ ডিপিডিসির মিটার রিডার দুজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের দুদিন পর গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর তাঁর জামিনে ছাড়া পান। ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে পুনরায় চাকরিতে বহাল করা হয়।
পুলিশের মামলায় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সিআইডি মসজিদ কমিটির সভাপতিসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। সে সময় সিআইডির কর্মকর্তা জানান, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। আদালত আদেশ দিলেও অনাপত্তি দেয়নি তিতাস গ্যাস।
জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ প্রথম আলোকে জানান, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।
এ বিষয়ে সিআইডি নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, বিধি অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হলে সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু তিন দফা আবেদন করেও তিতাসের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ফলে এখন পুরো বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভর করছে।