নারী
প্রতীকী ছবি

কোলে এখন দুই মাসের শিশুসন্তান। সে অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে রেখে যাকে পাচ্ছেন, তারই পায়ে ধরে শুধু বিচার দাবি করছেন এক নারী। বাঁচার জন্য কিছু একটা করার অনুরোধ জানাচ্ছেন। অন্যথায় শিশুসহ মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় তাঁর নেই বলে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

ওই নারী (২৪) বলছেন, এই সন্তানের বাবা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার ফয়লা এলাকার রাজু আহম্মেদ নামের এক যুবক। তিনি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর রাজু তাঁকে ও তাঁর সন্তানকে অস্বীকার করতে শুরু করেন। যদিও তাঁরা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছেন। উপায় না পেয়ে ধর্ষণের মামলা করেছেন। এর পর থেকে তাঁকে প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে তাঁকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজু আহম্মেদ বলেন, তিনি বিয়ে করেছেন সঠিক। ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাঝেমধ্যে সমস্যা হয়েছে, কিন্তু ছেড়ে দেননি। তাহলে কেন মামলা করলেন? এই মামলা করার কারণে তিনি সবকিছু অস্বীকার করছেন। তিনি বলেন, শ্বশুরবাড়িতে ওঠার জন্য ওই নারী মামলাটি করেছেন। এখন মামলা তুলে না নিলে তিনি কিছুই করবেন না।

ভুক্তভোগী নারীর বাবার বাড়ি মেহেরপুরে। মা-বাবার বিচ্ছেদের পর মায়ের সঙ্গে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নানার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ওই নারী বলেন, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যশোরে এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেন মা ও নানার বাড়ির লোকজন। তবে দুই বছর সংসার করার পর স্বামী তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। সেই সংসারে পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে আছে, থাকে নানির সঙ্গেই।
ওই নারী বলেন, সংসার করতে না পেরে তিনি কালীগঞ্জ শহরের একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) চাকরি নেন। এখানে কাজ করে ছেলেকে বড় করে তুলছিলেন। এমন সময় শহরের ফয়লা এলাকার নুর ইসলামের ছেলে রাজু আহম্মেদ তাঁর পিছু নেন। মাঝেমধ্যে কর্মস্থলে যেতেন, নানাভাবে কথা বলার চেষ্টা করতেন। একটি সময় তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি না থাকলেও রাজু তাঁকে নানাভাবে বিরক্ত করতেন। একপর্যায়ে বিয়ের কথা বলেন ওই নারী। ২০১৯ সালের ২ মে রাজু বিয়েতে রাজি হয়ে ফয়লা এলাকার একটি কাজি অফিসে নিয়ে একটি নিল রঙের কাগজে স্বাক্ষর করান। রাজু নিজেও সেই কাগজে স্বাক্ষর করেন। তারপর তাঁরা শহরের ঢাকালে পাড়ায় একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।

ওই নারী বলেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে রাজুকে জানান। এরপর রাজু তাঁকে এড়িয়ে চলতে থাকেন, এমনকি তাঁদের কোনো বিয়ে হয়নি বলে দাবি করেন। তাঁর গর্ভের বাচ্চাকে অস্বীকার করেন। এরপর তিনি কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ের কাবিন দাবি করলে কাজি বলেন, বিয়েটা মুখে মুখে হয়েছে, তাঁদের কোনো কাবিন হয়নি। এ কথা বলার পর তিনি ২০২১ সালের ২০ মে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। মামলাটি এখনো চলমান। রাজু ও তাঁর লোকজন এখন মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, দুই মাসের শিশুটি বর্তমানে অসুস্থ, তার প্রস্রাবের সমস্যা হচ্ছে। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন অস্ত্রোপচার করাতে হবে। কিন্তু কোনো টাকা নেই। যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি আরও বলেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এত দিন কষ্ট করে বাসায় ছিলেন। সন্তান জন্মের সময় সিজার করাতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, যা মানুষের কাছে হাত পেতে নিয়েছেন। এখন যে বাসায় ভাড়া থাকেন, তারও দুই মাসের টাকা বাকি। তাঁরা বাসা ছাড়তে বলছেন। অর্থের অভাবে ঠিকমতো খাওয়া হচ্ছে না, সেখানে বাচ্চাটি কীভাবে বাঁচাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।

তাঁর মা বলেন, এই বিয়ে তিনি দিতে চাননি। রাজু জোর করে বিয়ে করেছেন। এখন মেয়েটাকে রাস্তায় ভাসিয়ে দিলেন। তিনি এর বিচার দাবি করেন।

বিষয়টি নিয়ে দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জীবন কুমার বলেন, মামলাটি তিনি তদন্ত করছেন। ধর্ষণ ও ধর্ষণের সহায়তা করার অভিযোগে ওই নারী মামলা করেছেন। তদন্ত চলছে।