বিদ্যুৎ
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই অপরিণত ও কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া নবজাতকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। গত জানুয়ারি মাসে কোটি টাকা ব্যয়ে সদর হাসপাতালে এ ধরনের জটিলতা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের চিকিৎসার জন্য স্পেশাল কেয়ার নিউনেটাল ইউনিট (স্ক্যানো) চালু করা হয়। কিন্তু চালুর ২৩ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে স্পেশাল নিউনেটাল কেয়ার ইউনিট স্থাপন করা হয়। সেভ দ্য চিলড্রেনের মামণি প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালে ১১টি যন্ত্র স্থাপন করা হয়। ইউনিটটি আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো হয়। প্রথম দিকে শিশু ওয়ার্ডে ছয়টি যন্ত্রে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেশিসংখ্যক নবজাতককে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আরও পাঁচটি যন্ত্র ওই ইউনিটে স্থাপন করা হয়।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, কোনো হাসপাতালে স্পেশাল নিউনেটাল কেয়ার ইউনিট চালু করার প্রধান তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে হয়। সেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর থাকতে হবে, যন্ত্রগুলো বিদ্যুৎ গেলেও চালু রাখতে আইপিএস থাকতে হবে ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থাকতে হবে। কিন্তু এগুলো স্থাপন না করেই এবং অব্যবস্থাপনার কারণে ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইউনিটটি চালুর পর গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩টি নবজাতককে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী স্ক্যানো ইউনিটের উদ্বোধন করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে প্রতিদিন বঞ্চিত হচ্ছে চার-পাঁচটি অপরিণত ও কম ওজনের নবজাতক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন প্রথম আলোকে বলেন, আইপিএস কিংবা জেনারেটর লাইনের সংযোগ না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাড়াহুড়া করে ইউনিটটি চালু করেছে। এসিও স্থাপন করা হয়নি। লোডশেডিংয়ের কারণে ওই ওয়ার্ডের ছয়টি যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগের তার পুড়ে গেছে। তাই ইউনিটটি এখন বন্ধ রয়েছে। অপরিণত ও কম ওজনের নবজাতকদের (শূন্য থেকে ৪০ দিন বয়স) জন্য ইউনিটটি চালু করা হয়েছিল। একেকটি স্ক্যানো যন্ত্রের মূল্য ১০-১১ লাখ টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডের উত্তর দিকে ওই ইউনিট। চারপাশে গ্লাস। গ্লাস দিয়ে ঘেরা একটি কক্ষে ছয়টি ও আরেকটি কক্ষে পাঁচটি স্ক্যানো যন্ত্র। আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত ইউনিটটি বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স হেলেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে ১১টির মধ্যে ৬টি যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে এই ইউনিট ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বন্ধ রয়েছে। মামণি প্রকল্পের প্রকৌশলীরা এসে যন্ত্রগুলো দেখে গেছেন। ওয়ার্ডটি চালু করতে প্রতিটি যন্ত্রের জন্য আইপিএস ও এসি স্থাপন প্রয়োজন। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া আড়াই কেজি ওজনের শিশুদের এই ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরেই কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের পরিবারগুলো দুর্ভোগ সহ্য করেছে। ইউনিটটি আবার চালু হলে এই সমস্যা একটু হলেও লাঘব হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে ১১টির মধ্যে ৬টি স্ক্যানো যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ১৫ দিনের মধ্যে ইউনিটটি পুনরায় চালু করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াহীদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, চালুর সময় ওই ইউনিটের যে পর্যন্ত বিদ্যুতের তার পৌঁছে ছিল, সেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নতুন করে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের সমস্যার কারণে চালুর পর ছয়টি স্ক্যানো যন্ত্রের সার্কিট পুড়ে গেছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের মামণি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এটি মেরামত করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তৃতীয়ত, এই ইউনিটে সার্বক্ষণিক এসি চালু রাখতে হবে। তাই চারটি এসির প্রয়োজন। গণপূর্ত এখনো এসির বরাদ্দ দেয়নি। ১৫ দিনের মধ্যে এই ইউনিট চালু করা যাবে বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার কালিসীমা এলাকার মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, ‘গত ২৫ মার্চ দুপুরে আমার স্ত্রী একটি অপরিণত ছেলেশিশুর জন্ম দেয়। চিকিৎসক ছেলেকে ইনকিউবেটরে রেখে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সদ্য চালু করা ইউনিটটি বন্ধ। পরে টাকা ধার করে জেলার বেসরকারি শিশু হাসপাতালের ইনকিউবেটরে রেখে শিশুর চিকিৎসা করিয়েছি।’