ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর
বিলের ফসলি জমি থেকে আবার বালু তোলা শুরু
গত ৩১ জানুয়ারি বাঞ্ছারামপুরের বালিহাদহ বিল বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। এর পরের দিন থেকে আবার বালু তোলা শুরু হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়া বালিয়াদহ বিলের ফসলি জমি থেকে আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। এখন দিনের পরিবর্তে রাতের বেলা খননযন্ত্রের মাধ্যমে বালু তোলা হচ্ছে।
ভূমিহীন পরিবারগুলো অভিযোগ করে বলে, আগে দিনের বেলায় বালু তোলা হতো। এখন মাগরিবের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের জমি থেকে তোলা বালু দিয়ে আরেকটি খাসজমি ভরাট করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুধু গত ৩১ জানুয়ারি বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। এর পরের দিন থেকে আবার বালু তোলা শুরু হয়।
৩১ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ফসলি জমি থেকে বালু তুলে খাসজমি ভরাট’ ও একই দিন প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘বাঞ্ছারামপুরে ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করল প্রশাসন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিন দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের নির্দেশে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধ করলেও পরদিন গভীর রাত থেকে আবার বালু তোলা শুরু হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম জানান, বিষয়টি বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।
বাঞ্ছারামপুরের ইউএনও সৈয়দা শমসাদ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় এক চেয়ারম্যান বালু উত্তোলনের সম্পূর্ণ কাজটি করছেন। আপনি একটু তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।’ উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি। আপনার সঙ্গে পরে এ বিষয়ে কথা বলব।’ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য বালু ভরাট করার কাজটি করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আগে ইউএনও বলেছিলেন, বালু চেয়ারম্যান তুলছেন। বিষয়টি তিনি ভালো বলতে পারবেন।
এর আগে বালু উত্তোলন বন্ধে ভূমিহীন পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে দরিকান্দি ভূমিহীন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন মিয়া ২৪ জানুয়ারি ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন করেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ, কাজিরচর ও সাতদৌনা মৌজার ২৩৮ একর জমি কবুলিয়ত দলিলের মাধ্যমে ১৭২ জন ভূমিহীনের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়। এসব জমিতে তাঁরা আবাদ করে সংসার চালান। দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলার রূপসদী গ্রামের নবী মিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় কয়েকজন বালিয়াদহ বিল থেকে বালু উত্তোলন করছিলেন। বাধা দিয়েও কাজ হয়নি।
মামুন মিয়া বলেন, ‘খননযন্ত্র এখনো আগের জায়গায় রয়েছে। ভূমিহীনদের ফসলি জমি থেকে বালু তোলে আরেক ইউনিয়নের খাস জায়গা ভরা করা হচ্ছে। আগে দিনের বেলা বালু তোলা হলেও এখন মাগরিবের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বালু তোলা হয়। বালু উত্তোলনের জন্য কোনো ধরনের দরপত্র আহ্বানও করা হয়নি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য তো বরাদ্দ আছে। আমাদের ফসলি জমি কেন নষ্ট করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, এখান থেকে উত্তোলন করা বালু দিয়ে রূপসদী ইউনিয়নের রূপসদী পশ্চিম পাড়ার ২৭ শতক খাসজমি ভরাট করা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে রূপসদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম বলেন, ইউএনও বালু তুলতে বলেছেন। দিনের কখন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ড্রেজারের সঙ্গে থাকি না। আর বালুর ব্যবসাও করি না।’