বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীর চাকরির জন্য প্রস্তুত করে দিতে হবে : শিক্ষামন্ত্রী

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান মঞ্চ। আজ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে
প্রথম আলো

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, চাকরিপ্রার্থী আর চাকরিদাতার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এই জায়গায় দক্ষতার অভাব রয়েছে। এ দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা চাকরি পান না। সেখানে অন্য দেশের কম ডিগ্রিধারীরা চাকরি পাচ্ছেন। কারণ, চাকরিদাতা কাউকে চাকরি দিয়ে এক–দুই বছর ধরে শেখাবেন না। তিনি তৈরি মানুষ চান। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়কে এই দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের শিক্ষার্থীদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে দিতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আয়োজিত প্রথম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।

দীপু মনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু ভাবলে হবে না যে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দেবে, তারপর বাকিটা শিক্ষার্থীর। কীভাবে শিক্ষার্থীরা এ ধরনের দক্ষতা অর্জন করবে, সেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। কর্মজগতে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যে ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে, শুধু সেই ডিগ্রি দিয়ে গেলেই চলবে না। এ বিষয়ে তাঁরা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছেন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তা অন্তর্ভুক্ত হবে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব কাঠামো করে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের যোগ্য ও বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। এ কারণে এত দীর্ঘ সময়ের ডিগ্রির বদল ঘটাতে বলা হচ্ছে। ২ সপ্তাহ, ৪ সপ্তাহ, ১২ সপ্তাহ, ৬ মাস ছোট ছোট কোর্স করে দক্ষতা বাড়িয়ে নেবে শিক্ষার্থীরা। এই সুযোগগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করতে হবে।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী প্রথম সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আজ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে
প্রথম আলো

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আজকে সারা বিশ্বে সফট স্কিলের কথা বলা হচ্ছে। শুধু বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করলেই হবে না। কিংবা কারিগরিভাবে, প্রযুক্তিগতভাবে জ্ঞান, দক্ষতা অর্জন করাই যথেষ্ট হবে না। এর সঙ্গে আরও কিছু দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। সেই দক্ষতা হচ্ছে যোগাযোগের দক্ষতা। তাঁরা অনেক কথা বলেন, কিন্তু কতটা বোঝাতে পারেন। সেই দক্ষতা অর্জনে শ্রেণিকক্ষে শুধু বই পড়লে হবে না, সেগুলো চর্চার মধ্য দিয়ে শিখতে হয়। তাঁরা এই দক্ষতা একেবারে প্রাথমিক থেকে শুরু করে প্রতিটি শ্রেণিতে নানা রকম করে শেখানোর জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিখলে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি থাকবে না।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন রকম গবেষণার মাধ্যমে তাঁরা নতুন শিক্ষাক্রমটি শুরু করেছিলেন ২০১৭ সালে। সাড়ে তিন বছরে তাঁরা এটিকে ভালো জায়গায় এনেছেন। ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।

অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, লেখাপড়ায় ফাঁকি দেওয়াটা তাঁর খুব আনন্দের বিষয় ছিল। এই কথায় অভিভাবক, শিক্ষকেরা খুশি হবেন না। কারণ, ফাঁকিবাজ ছাত্র তাঁরা নিশ্চয় পছন্দ করেন না। অন্যান্য বিষয়ে তাঁর মনোযোগ ছিল বেশি। গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকা, দেয়াল পত্রিকা বের করা, নাটক করা, কবিতা আবৃত্তি করা—এগুলোই ভালো লাগত বেশি।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী প্রথম সমাবর্তনে ডিগ্রিধারীরা। আজ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে
প্রথম আলো

আসাদুজ্জামান নূর আরও বলেন, তাঁর শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যতীন সরকার একবার বলেছিলেন, বাংলাদেশে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। বর্তমানে এটিই হলো বাস্তবতা। সবাই পরীক্ষা নেওয়া নিয়ে ব্যস্ত। কে কী রকম শিখছে, তা নিয়ে তাঁরা খুব ভাবিত নন। সবাই সন্তানের ভালো ফলের দিকে নজর দিচ্ছেন। পাঠ্যপুস্তকের পাতার মধ্যে তাদের আটকে রেখেছেন। কিন্তু জীবনটা তো অনেক বড়।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীকে ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ এবং নয়জন শিক্ষার্থীকে ‘ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ প্রদান করা হয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওসমান গণি তালুকদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, ইউজিসি সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ, সাবেক ছাত্রনেতা ও সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান প্রমুখ।