গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে নিজ ঘরের একটি কক্ষে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় নাজমিনকে (১৬)। সে বালিঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ সময় রক্তমাখা একটি দা ফেলে পালাতে দেখা যায় ওই বাড়িতে আশ্রিত নাজিমকে। খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে নাজিমকে আটক করতে তৎপর হয়। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিয়ানীবাজারের আঙ্গারুলি গ্রামে বোনের বাড়িতে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশ নাজিমকে আটক করে।

পুলিশ জানায়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাজিম হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় গতকাল রাতে নাজমিনের পালক বাবা সামসুল হক চৌধুরী বাদী হয়ে নাজিমকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন। নাজিম আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় আজ সকালে তাঁর জবানবন্দি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রেকর্ড করা হয়।

নাজিমের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নাজিমের বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখায়। তাঁর বাবা দুই বিয়ে করেছেন। দুই বোন ও দুই ভাইয়ের পরিবারে তিনিই সবার বড়। বছরখানেক ধরে বিয়ানীবাজারের শেওলা ইউনিয়নের বালিঙ্গা গ্রামে সামসুল হক চৌধুরীর বাড়িতে থাকতেন নাজিম। ওই বাড়ির একটি আলাদা কক্ষে নাজিম তাঁর মাকে নিয়ে বসবাস করতেন। নাজিম গৃহস্থালি কাজে সহায়তা করতেন। তাঁর মা ওই বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন।

হত্যার কারণ সম্পর্কে নাজিম জবানবন্দিতে বলেছেন, নাজমিনকে তিনি পছন্দ করতেন। এক বছর আগে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক হয়। কিন্তু প্রায় ছয় মাস আগে মেয়েটি সম্পর্কটি ভেঙে দেয়। সম্পর্ক ভাঙার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় মেয়েটি তাঁকে ‘গোলাম’ বলে ভর্ৎসনা করে। একপর্যায়ে ‘গোলামের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়। এই ক্ষোভ থেকে তিনি মেয়েটিকে হত্যা করেছেন।

জবানবন্দিতে হত্যার বিবরণও দেন নাজিম। তিনি বলেছেন, ‘গোলামের বাচ্চা’ গালি শোনার পর থেকে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। সেই সময় থেকে তিনি মেয়েটিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনায় ছিলেন। সম্প্রতি মেয়েটির বিয়ে অন্য একটি স্থানে চূড়ান্ত হওয়ায় সেই ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। এরপর এক সপ্তাহ ধরে সুযোগ খুঁজছিলেন গালির শোধ নেওয়ার। গতকাল সকাল থেকে তিনি বাড়ির সামনে একটি দা নিয়ে কাজ করার ভঙ্গিতে ছিলেন। বাড়ির পুরুষেরা সবাই যখন বাইরে চলে যান, তখন তিনি দা নিয়ে ঘরে ঢোকেন। বাড়িতে থাকা মেয়েটির পালক মা ও ভাইয়ের স্ত্রী যখন রান্নাঘরে ছিলেন, তখন নাজিমন টেলিভিশনের কক্ষে একা বসে টেলিভিশন দেখছিল। এই সুযোগে পেছন দিক থেকে তার গলায় দা দিয়ে একটি কোপ দেন নাজিম। এরপর আরও দুটো কোপ দেন।

নাজিম জবানবন্দিতে আরও বলেন, টেলিভিশন চলায় কেউ কিছু বুঝতে পারেনি। তিনটি কোপ দেওয়ার সময় হাত ফসকে দা পড়ে যায়। এ সময় মেঝেতে পড়ে থাকা দা তুলতে গেলে কেউ একজন তাঁকে দেখে ফেলেন। এ সময় তিনি পালিয়ে যান।