বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার বিচার ঠেকাতে আরও হত্যার অভিযোগ

মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার বিচার ঠেকাতে এক সাক্ষীসহ দুজনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন হয়
ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার বিচার ঠেকাতে আসামিদের বিরুদ্ধে আরও দুজনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। দুজনের মধ্যে একজন ওই মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। গ্রামবাসী বলছেন, এলাকায় জমি দখলের প্রতিবাদ করায় হত্যা করা হয়েছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন মাস্টারকে। এখন বিচার বাধাগ্রস্ত করতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন আসামিরা।

জমি দখলের প্রতিবাদ করার জেরে ২০১৮ সালের ৩ জুন খুন হন উপজেলার জামতলী গ্রামের আবদুল মতিন। তিনি ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ঘটনার পরের দিন আটজনকে আসামি করে ত্রিশাল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত ব্যক্তির ছেলে মাহমুদুল হাসান। এ মামলার সাক্ষী ছিলেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দপ্তরি রফিকুল ইসলাম। তাঁকে ২০১৯ সালে হত্যা করা হয়। আর রফিকুল হত্যা মামলার এক সাক্ষীর চাচা গত বৃহস্পতিবার মারধরের শিকার হন। পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর নাম আবুল কালাম।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ত্রিশাল উপজেলার খাগাটি ও জামতলী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন নিহত আবুল কালামের ভাতিজা মো. সোহাগ। তিনি বলেন, জোর করে অন্যের জমি দখল করার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় জিলানী ও তাঁর ভাই তোফাজ্জল কয়েকজন সহযোগী মিলে মতিন মাস্টারকে খুন করেন। ওই খুনের বিচার চেয়ে একই লোকদের হাতে খুন হন স্থানীয় স্কুলের দপ্তরি রফিকুল ইসলাম।

সোহাগ আরও বলেন, ‘আমি দপ্তরি রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সাক্ষী। আমার শ্বশুর রুহুল আমিন মতিন মাস্টার হত্যার সাক্ষী। এ কারণে জিলানী আমাকে প্রায় হুমকি দিতেন। হুমকির ঘটনার অডিও রেকর্ডসহ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। এরপরও বৃহস্পতিবার বিকেলে খাগাটি বাজারের পাশে আমাকে ধরে মারধর করতে শুরু করেন জিলানী ও তোফাজ্জলের লোকেরা। খবর পেয়ে আমার চাচা আবুল কালাম আমাকে বাঁচাতে গেলে তাঁকে কুপিয়ে জখম করেন। পরে শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।’

সংবাদ সম্মেলনে খুন হওয়া তিন ব্যক্তির স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জানান, তোফাজ্জল ও জিলানী দুই ভাই। তাঁদের বাড়ি ত্রিশাল উপজেলার খাগাটি গ্রামে। তোফাজ্জল মতিন মাস্টার হত্যা মামলার আসামি ও জিলানী রফিকুল ইসলাম হত্যার মামলার আসামি। এই দুই ভাই ছাড়া দুটি হত্যা মামলায় তাঁদের কয়েকজন সহযোগীও আসামি। তবে আসামিরা দুটি মামলায়ই জামিনে মুক্ত আছেন। মতিন মাস্টার হত্যা মামলার বিচারকাজ চলমান। রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলাটির দ্রুত সময়ের মধ্যে সাক্ষী গ্রহণ শুরু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আবুল কালাম হত্যার ঘটনায় ত্রিশাল থানায় মামলা করেছেন সোহাগ। এ মামলায়ও জিলানী, তোফাজ্জলসহ মোট নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্বজনদের অভিযোগ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার হত্যার বিচার থেকে বাঁচতে জিলানী, তোফাজ্জল ও তাঁদের সহযোগীরা মামলার সাক্ষী ও গ্রামের সাধারণ বাসিন্দাদেরও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। এতে গ্রামের সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছেন।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন বলেন, তোফাজ্জল ও জিলানী পলাতক। পুলিশ মামলার তদন্ত করছে। পাশাপাশি আবুল কালাম হত্যার সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার ও রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সম্পর্ক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।