বগুড়া
বৃষ্টিতে খেত নষ্টের অজুহাতে বাড়ানো হলো সবজির দাম
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতির কথা। তবে বাজার ঘুরে সবজির আমদানি দেখা গেছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই।
কনকনে শীতের মধ্যেই গত শনিবার সকালে বগুড়ার মহাস্থান হাট ছিল কৃষক, পাইকার আর ফড়িয়াদের হাঁকডাকে সরগরম। বাজারে সবজির আমদানিও ছিল বেশ। কিন্তু এই সবজি এক হাত বদলে বগুড়া শহরের বাজারে যেতেই দাম হাঁকা হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি।
শনিবার মহাস্থান হাটের ১০ টাকা কেজির দেশি পাকরি আলু বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে কিনতে হয় ২০ টাকায়। মহাস্থান হাটের ৩০ টাকা কেজিদরের দেশি বেগুন, কাঁচা মরিচ এবং দেশি শিমও শহরের ফতেহ আলী, বকশীবাজার ও কলোনি বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৬০ টাকা কেজিদরে কিনতে হয় ক্রেতাদের।
একই অবস্থা ছিল শসা, ফুলকপি ও গাজরের দামের বেলায়। মহাস্থান হাট থেকে বগুড়া শহরের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা বলছেন, মহাস্থান পাইকারি বাজার থেকে বগুড়ার খুচরা বাজার পর্যন্ত সবজি পরিবহনে খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে গড়ে এক টাকা। মহাস্থান হাটে এক কেজি সবজি বিক্রি করে কৃষক উৎপাদন খরচ তুলতে না পারলেও, এক হাত বদলের পর ওই সবজি শহরের বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।
শহরের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাঘের বৃষ্টিতে সবজির খেত নষ্ট হয়েছে। এতে হাটে সবজির সরবরাহ কমেছে। সরবরাহ ঘাটতির কারণেই শীতকালীন সব সবজির দাম বেড়েছে। তবে শনিবার মহাস্থান হাটে সবজির সরবরাহের চিত্র দেখে এবং পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে সবজির আমদানি দেখা গেছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই।
বৃষ্টির কারণে দেশি আলু এবং কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজিতে ১-২ টাকা বেড়েছে। অন্য কোনো সবজির দামে প্রভাব পড়েনি।
মহাস্থান হাটে দেখা যায়, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, শসা, গাজর, কাঁচা মরিচ, আগাম আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির সমারোহ। হাটে আলু বিক্রি করতে আসা ঘাগুরদুয়ার গ্রামের কৃষক আবদুস সামাদ বলেন, ‘৪০০ টাকা মণদরে আলু বেচ্চা খরচ উটপি লই। বিঘাত লোকসান হবি ৫-৬ হাজার টেকা। অথচ হামাকেরে থিনি ১০ টেকা কেজিদরত পাকরি আলু কিনে ব্যাপারীরা শহরত লিয়ে বেচিচ্চে ২০ টেকা কেজি দরত।’
শনিবার মহাস্থান থেকে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজার গিয়ে কথা হয় কাটনারপাড়ার বাসিন্দা রাজিবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই দিন আগেও এক কেজি কাঁচা মরিচ, দেশি বেগুন, দেশি শিম কিনেছেন ৩০ টাকা দরে। এখন এসব সবজির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। যেন সব চলছে ইচ্ছেমতো।
তবে শহরের বকশীবাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী সামিউল ইসলাম বলেন, ‘মাঘের বৃষ্টিত সবজির খেত মাঠে মারা গেচে। বৃষ্টির কারণে পাইকারি মোকামে সব রকমের সবজির দাম বাড়চে। খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়ছে।’
মহাস্থানহাট আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে দেশি আলু এবং কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজিতে ১-২ টাকা বেড়েছে। অন্য কোনো সবজির দামে প্রভাব পড়েনি। মোকামে আমদানিও স্বাভাবিক আছে।