চলাচলের জন্য বাড়ির আঙিনায় বানানো হয়েছে সাঁকো। গত মঙ্গলবার মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ভারী বৃষ্টিপাতে যশোরের ভবদহের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। গত শনিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িঘর, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ।

যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এই এলাকার পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদ–নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে এখন ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হয় না।

যশোর আবহাওয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর মাসে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ধরা হয় ২৫৪ মিলিমিটার। ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তা অব্যাহত ছিল সোমবার সকাল পর্যন্ত। ফলে ভবদহ অঞ্চলের ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে। বিল উপচে পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের গ্রামগুলোতে।

গত মঙ্গলবার চারটি গ্রাম ঘুরে মানুষের দুর্ভোগ চোখে পড়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলেও প্রতিদিন এক-দুই ইঞ্চি করে পানি বাড়ছে। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় মাচা করে বসবাস করছে মানুষ। অনেক ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে আছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় অনেক স্থান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের মাধুরী মণ্ডলের ঘরের মধ্যে পানি উঠেছে। বাঁশের খুঁটির ওপর তক্তা বসিয়ে কিছুটা উঁচু করে সেখানে থাকছেন তিনি। ঘরের এক পাশে তিনটি ছাগল ও চারটি মুরগি থাকে। অন্য পাশে তিনি রান্নাবান্না করেন। মাধুরী বলেন, ‘ঘরের মধ্যে জল। থাকা যাচ্ছে না। যাবই-বা কোথায়? ছাগল ও মুরগি নিয়ে এক ঘরে থাকছি।’

এলাকার নলকূপগুলো তলিয়ে থাকায় খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। শৌচাগার তলিয়ে থাকায় মানুষ কষ্টে আছে। একই উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামে বাড়ি আছে ১৪৮টি। এর মধ্যে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পানি উঠেছে। তবু ঘরের মধ্যে ইট দিয়ে খাট উঁচু করে মানুষ থাকছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে, পানির উচ্চতা আরেকটু বাড়লে সবাইকে ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় উঠতে হবে।

মনিরামপুর উপজেলার হাটগাছা গ্রামের তাপসী বৈরাগী ১৫ হাজার টাকা খরচ করে সম্প্রতি বালু দিয়ে উঠান উঁচু করেছেন। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। পুরো উঠান এখন জলমগ্ন। পানি বাড়তে বাড়তে ঘরে উঠার উপক্রম হয়েছে। একই গ্রামের সুকৃতি মণ্ডল বলেন, বৃষ্টি থেমে গেলেও প্রতিদিন এক-দুই ইঞ্চি করে পানি বাড়ছে। যেকোনো সময় ঘরের ভেতরে পানি উঠে যাবে। অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় বলেন, তাঁর ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম। সব কটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত। এর মধ্যে দুটি গ্রামে আংশিক এবং ১২টি গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি উঠেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলছে, ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে আপাতত ব্যবস্থা হিসেবে বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সরানোর কাজ চলছে। আর স্থায়ী ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে খননযন্ত্র দিয়ে ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে ৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার এলাকায় শ্রী ও টেকা নদীতে পাইলট চ্যানেল কাটার কাজ চলছে।

চলমান জলাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলছে পাউবোর যশোরের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলামের মুঠোফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।