বৃষ্টি হলে ঘরে, রাস্তায় পানি

পানিনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে প্রায়ই ভোগান্তি পোহাতে হয় পৌরসভার বাসিন্দাদের।

বৃষ্টির পানি জমে আছে মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে। গত বুধবারের ছবি।
প্রথম আলো

বৃষ্টির পর ১৮ ঘণ্টার বেশি পেরিয়ে গেছে। এরপরও ঘর থেকে পানি নামেনি। জলাবদ্ধতা দূর করতে অনেকেই মোটর ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বেশ কিছু বাড়ির চার পাশেই পানি জমে আছে। বসবাসের পাশাপাশি চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। গত বুধবার বিকেলে ভারী বর্ষণের পর মাগুরা শহরের কলেজপাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়।

পানিনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে প্রায়ই এ রকম ভোগান্তি পোহাতে হয় পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ কেন্দ্রের উপপরিচালকের কার্যালয়ের হিসেবে প্রায় আড়াই ঘণ্টায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত শহর এলাকায় ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। কলেজ পাড়া ছাড়াও পৌরসভার জেলা পাড়া, আদর্শ কলেজ পাড়া, হাজি আবদুল হামিদ সড়ক, হাসপাতাল পাড়া, পশু হাসপাতাল পাড়া, কাউন্সিল পাড়া, পারনান্দুয়ালী ব্যাপারী পাড়া ও বিশ্বাস পাড়া, পিটিআই পাড়া, খান পাড়া, মোল্লা পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘক্ষণ পানি জমে থাকতে দেখা গেছে জেলা সদর হাসপাতাল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যালয়ে। এর মধ্যে অনেক এলাকায় পানিনিষ্কাশনের নালা নেই। আবার কিছু এলাকায় নালা থাকলেও তা ভরাট হয়ে গেছে।

পৌরসভার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহর ঘেঁষে নদী থাকলেও কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলার কারণে প্রতিবছর এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ সম্পর্কে মাগুরা পৌরসভার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, সংকট সমাধান করতে হলে শহরের মাস্টার ড্রেন বা বড় ড্রেনগুলোর নিষ্কাশন মুখ পর্যন্ত নিয়মিত পরিষ্কার করার সুযোগ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, মহাসড়কের পাশের সড়ক বিভাগের জায়গায় নালাগুলো দখলমুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভায়না মোড় বা কলেজ রোডের তুলনায় নবগঙ্গা পাড়ে ড্রেনের নিষ্কাশন মুখ পাঁচ থেকে সাত ফুট উঁচু। ফলে ওই এলাকার ড্রেনের পানি নদীতে আনা সম্ভব নয়।

শহরের কলেজ পাড়ার বাসিন্দা সজীব আহম্মেদ ফরিদ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ‘বৃষ্টির পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা হতে চলেছে। ঘর থেকে পানি এখনো নামেনি। একটু বৃষ্টি হলেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বছর বছর এই সংকটে রয়েছি আমরা।’

পারনান্দুয়ালী এলাকার বাসিন্দা শেখ ইলিয়াস বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই ব্যাপারী পাড়া, বউ বাজারসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অনেক বছর ধরে আমরা ড্রেন তৈরির দাবি জানিয়ে আসছি। নদী থেকে এত কাছের এলাকা অথচ এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না পৌর কতৃপক্ষ।’

মাগুরা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে মাগুরা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার ড্রেন নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকায় ড্রেন। পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, পুরো পৌর এলাকা ড্রেনেজ ব্যবস্থার আওতায় আনতে আরও অন্তত ২০ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণ করা প্রয়োজন। বরাদ্দ অনুযায়ী ধাপে ধাপে সেগুলো বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

পৌরসভার মেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল বলেন, ‘কলেজ রোডে শহরের মূল ড্রেন কার্যকর করতে পৌরসভার একটি মার্কেটের আংশিক, ডিসি কোর্ট মার্কেট ও আলিয়া মার্কেট মার্কেট ভাঙতে হবে। এরপর সড়ক বিভাগ নালাগুলো দখলমুক্ত করে দিলে ভায়না থেকে ভিটাসাইর এবং একই এলাকা থেকে ঝিনাইদহ রোডের আবালপুর পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ করবে পৌরসভা।’