বেতনের টাকায় সংসার চালাতে পারেন না মোহাম্মদ আলী

গাইবান্ধা আসাদুজ্জামান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দারোয়ান মোহাম্মদ আলী
ছবি: প্রথম আলো

‘সগলে কয়, উমুক চাকরি করে। কাউয়ো সাহায্য দ্যায় না। লাইনোতও দারব্যার পাইনে। কিনতো বাজারোত য্যানকা (যে হারে) করি জিনসের দাম বাড়ে, স্যামকা (সে হারে) করি হামারঘরে বেতোন বাড়ে না। দেনাদপা করি সোংসার চলব্যার নাগচি। মে দিবোস আলে সগলে হামারঘরে কতা কয়। পরে হামারঘরে কোনো উন্নতি হয় না। কালদিন পর ঈদ। ব্যাটাক একনা পাঞ্জাবি দিচি। ঈদের বাজার করব্যার পাইনাই।’

এভাবেই আজ রোববার মে দিবসে ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মদ আলী (৬০)। তিনি গাইবান্ধা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আসাদুজ্জামান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে দারোয়ান পদে চাকরি করেন। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের থানসিংহপুর গ্রামে। বাবা ফজলার রহমান ও মা আমিরন নেছা অনেক আগে মারা গেছেন।

মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আরজিনা বেগম গৃহিণী। দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আল-আমিন বিয়ে করে আলাদা থাকেন। একমাত্র মেয়ে আয়শা সিদ্দিকার বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলে আল মোমিন একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বর্তমানে তিন সদস্যের সংসার।

দরিদ্র পরিবারে মোহাম্মদ আলীর জন্ম। অষ্টম শ্রেণি পাস করে লেখাপড়া চালাতে পারেননি। ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি দারোয়ান পদে চাকরি নেন। প্রথমে তাঁর মাসিক বেতন-ভাতা ছিল ৪৫০ টাকা। বর্তমানে সব মিলিয়ে তিনি ১১ হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান।

মোহাম্মদ আলী জানান, দৈনিক তাঁর আট ঘণ্টা শ্রম দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি প্রতিদিন ১৪ ঘণ্টা শ্রম দিচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়।

মোহাম্মদ আলী জানান, দৈনিক তাঁর আট ঘণ্টা শ্রম দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি প্রতিদিন ১৪ ঘণ্টা শ্রম দিচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি মেয়েদের। তাই সতর্কতার সঙ্গে থাকতে হয়। অবহেলা করার সুযোগ নেই। যেভাবে শ্রম দিতে হয়, সেভাবে বেতন বাড়েনি।

কম বেতনে সংসার চালান কীভাবে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী বলেন, বেতনের ১১ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে সংসার চলে না। তাই আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর কাছে ধারদেনা করে সংসার চলছে। চাল, ডাল, তরকারি, ওষুধের দোকানে বাকি বেড়েছে। এ পর্যন্ত তাঁর দুই লাখ টাকা ঋণ হয়েছে। সব মিলিয়ে তিনি দুই চোখে অন্ধকার দেখছেন। ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। দুই বেলা খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো হচ্ছে না। কত দিন মাংস কিংবা বড় মাছ কেনা হয়নি, তাঁর মনে নেই। বিদ্যুৎ বিল, ওষুধ, বাজার খরচ ও লেখাপড়ার খরচ তো আর বন্ধ রাখা যায় না। অভাবের কথা কাউকে বলতে লজ্জা লাগে।

মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, সবাই জানে তিনি চাকরি করেন, তাই মানুষের কাছে হাত পাততে পারছেন না। তাঁর কষ্টে ভরা জীবন চলছে ধুঁকে ধুঁকে।