লালমনিরহাটের পাটগ্রাম
বোরো ছেড়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা
উৎপাদন খরচ বেশি ও লাভ কম হওয়ায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা বছর বছর কমে যাচ্ছে। অন্যদিক ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় এবার বোরো ধানের চাষ কমেছে, ভুট্টা চাষ বেড়েছে। কৃষকেরা বলছেন, বোরো ধান চাষে সেচ খরচ বেশি, উৎপাদন খরচই ওঠে না। আর ভুট্টার উৎপাদন খরচ কম, ফলনও বেশি হয়। তাই চলতি মৌসুমে এ উপজেলার কৃষকেরা ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২১ হাজার ২৬০ হেক্টর চাষযোগ্য আবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে এবার ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ধান চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বছর বছর কমে যাচ্ছে। অন্যদিক ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
২০২০-২১ মৌসুমে ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়। ২০১৯-২০ মৌসুমে ৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও ১২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়।
এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধান চাষে সেচ খরচ বেশি। অপরদিকে ভুট্টার বাজারদর ভালো। তাই কৃষকেরা বোরো বীজতলা তৈরি করার পরও ভুট্টা চাষ করছেন। গতকাল শুক্র ও গত বৃহস্পতিবার জগতবেড়, পাটগ্রাম কুচলিবাড়ী, বুড়িমারী ও জোংড়া ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় তিন ভাগ খেতে কৃষকেরা ভুট্টার বীজ বপন করেছেন। আর এক ভাগ খেত ফাঁকা রেখেছেন। এ জমি তামাক ও ফাঁকা জমিতে বোরোসহ অন্য ফসল চাষের জন্য রাখা হয়েছে। তবে কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের পানবাড়ি গ্রামসহ ছয়টি গ্রামে কোথাও বোরো বীজতলা লাগানোই হয়নি।
পানবাড়ি গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন বলেন, বাজারে বর্তমান এক মণ (৪০ কেজি) ধান ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভুট্টার বাজারদর ১ হাজার ১০০ টাকার বেশি। সব মিলিয়ে বোরো ধানের উৎপাদন খরচ পড়ে মণপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। কেননা ২৫ শতাংশ (এক দন) জমিতে ধান হয় ১০ থেকে ১২ মণ। এতে ধান চাষে লাভ তো দূরের কথা, আবাদের খরচও ওঠে না। আর একই জমিতে ভুট্টা চাষ করলে ফলন হয় ২৮ থেকে ৩৫ মণ। সব মিলিয়ে খরচ হয় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। এতে লাভ হয় দ্বিগুণ টাকা।
আব্বাস মিয়া বলেন, দুই ফসলি জমি হিসেবে আগাম তামাক লাগানো হয়েছে। এরপর ভুট্টা লাগাবেন। আগে ভেবেছিলেন বোরো চাষ করবেন। কিন্তু খরচ বেশি হবে ভেবে সে চিন্তা বাদ দিয়েছেন।
বাউরা গ্রামের কৃষক মামুন হোসেন (৩৫) বলেন, তাঁর যে জমি ছিল, সবগুলোতে গতবার বোরো চাষ করেছিলেন। তাতে খরচ বেশি। ফলনও বেশি একটা ভালো হয় না। আবাদের খরচও ওঠে না। এবার আর বোরো ধান চাষ করবেন না। সব জমিতে ভুট্টা লাগাবেন।
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর গফ্ফার বলেন, এ উপজেলার মাটি বেলে দোআঁশ। তাই বোরো ধান চাষে সেচের পানি বেশি লাগে। এক দিনের বেশি পানিও জমে থাকে না। যার কারণে সেচ খরচ বেশি হয়। এতে কৃষকদের বোরো চাষের আগ্রহ কমে গেছে। তা ছাড়া ভুট্টা চাষে সেচ খরচ কম উৎপাদন বেশি, বাজারদরও ভালো।