ভর্তি নিতে দেরি করায় শ্বাসকষ্টে ভোগা বৃদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী ভর্তি নিতে দেরি করায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাতেই শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে করতে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ জন্য জরুরি বিভাগে কর্তব্যরতদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনেছেন রোগীর স্বজনেরা। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার।

মারা যাওয়া ওই নারীর নাম মনোয়ারা বেগম (৭০)। তিনি সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা। তাঁর স্বামীর নাম মৃত জুলফিকার আলম।

মনোয়ারা বেগমের ছেলে দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মা আগে থেকে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ তাঁর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ক্রমেই তা বাড়তে থাকলে রাত নয়টার দিকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের একজন পল্লি চিকিৎসককে ডাকা হয়। তিনি রোগীকে দ্রুত একটি হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ দেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি মাকে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন জরুরি বিভাগের ফটকে তালা ঝুলছে। ডাকাডাকির পর পাশের একটি কক্ষ থেকে এক ব্যক্তি বেরিয়ে আসেন। সমস্যার কথা বলে রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানালে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আগে ইসিজি করিয়ে আনেন। অক্সিজেন লাগলে পরে দেখা যাবে। যেটা বলেছি, সেটা করেন।’

দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, এ সময় তিনি বারবার অক্সিজেনের কথা বললেও ওই ব্যক্তি কোনো কথা শোনেননি। পরে তিনি ইসিজি করাতে একাধিক ক্লিনিকে যান, কিন্তু কোথাও ইসিজি করাতে পারেননি। পরে রাত পৌনে একটার দিকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহানারা আরজু রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানতে চাইলে চিকিৎসক জাহানারা আরজু প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীকে হাসপাতালে প্রথম যখন আনা হয়েছে, তখন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (স্যাকমো) মো. ইসমাইল তাঁকে জানাননি। না জানিয়েই তিনি রোগীর ইসিজি করিয়ে নিয়ে আসতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি জানার পর যখন রোগীকে দেখেছেন ততক্ষণে রোগী মারা গেছেন। তিনি রোগীকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি বিভাগের ফটক বন্ধ থাকার অভিযোগ ঠিক নয়। জরুরি বিভাগ-সংলগ্ন ফটকটি করোনাকালীন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পূর্ব পাশে আরও দুটি ফটক সব সময় খোলা থাকে। মনোয়ারা বেগম নামের ওই নারীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর স্যাকমো তাঁকে দেখে ইসিজি করিয়ে আনার পরামর্শ দেন, পাশাপাশি কর্তব্যরত চিকিৎসককে খবর দেন। কিছুক্ষণ পর তাঁরা পুনরায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন, রোগী মারা গেছেন।

জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।