ভাঙা কালভার্টে ঘটছে দুর্ঘটনা

কালভার্ট ভাঙায় সড়ক বিচ্ছিন্ন। কিন্তু সড়কের দুই পাশে নেই কোনো সর্তকতামূলক চিহ্ন।

সড়কের পুরোনো কালভার্ট ভেঙে ফেলা হয়েছে। নতুন কালভার্ট নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। সম্প্রতি কুমারখালী আদাবাড়িয়া খালপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রায় ১০ মাস আগে পুনর্নির্মাণের জন্য পুরোনো কালভার্টটি ভাঙা হয়েছে। কাজের মেয়াদও শেষ হয়েছে ১০ মাস আগে। কিন্তু এখনো কাজই শুরু হয়নি। কালভার্ট ভাঙায় সড়ক বিচ্ছিন্ন। কিন্তু সড়কের দুই পাশে নেই কোনো সর্তকতামূলক চিহ্ন। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন, ঘটছে দুর্ঘটনা। এ চিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া খালপাড়া এলাকার।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ সড়ক সংরক্ষণ প্রকল্পে লাহিনী বটতলা-পান্টি সড়কের আদাবাড়িয়া এলাকায় ৩ মিটার দীর্ঘ ও ৩ মিটার প্রস্থের কালভার্ট নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ৮ লাখ ১২ হাজার ১৯৫ টাকা চুক্তিমূল্যে কুষ্টিয়া শহরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আসিফ এন্টারপ্রাইজ কার্যাদেশ পায়।

২০২০ সালের ২ নভেম্বর শুরু হয়ে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পুরোনো কালভার্ট ভাঙার পর কাজ আর শুরু হয়নি। এলাকায় ঠিকাদারের লোকজনকেও দেখা যায় না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সড়কে চলাচলকারী লোকজন। ভাঙা অংশে কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো চিহ্ন। চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তাও নির্মাণ করেননি ঠিকাদার।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার চাঁদপুর, বাগুলাট ও পান্টি ইউনিয়নের মানুষ এই সড়ক দিয়ে কুষ্টিয়া শহরে যাতায়াত করে থাকেন। দিনের বেলায় কোনোমতে চলাচল করা গেলেও রাতের চিত্র ভিন্ন। প্রতি রাতে ঘটছে দুর্ঘটনা। রাতে কেউ না কেউ দুর্ঘটনার শিকার হন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের পাশে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। পাকা সড়কের মধে৵ কালভার্ট নির্মাণের জন্য খোঁড়া হয়েছে। সেখানে পানি জমে আছে। স্থানীয় লোকজন সড়কের পাশ দিয়ে চলাচলের জন্য বাঁশের সাঁকো বানিয়ে দিয়েছেন। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।

কলেজছাত্র নিলয় হোসেন বলেন, সড়কে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। গত রোববার রাত ১০টার দিকে একজন শিক্ষক মোটরসাইকেলসহ ভাঙা অংশে পড়ে যান। তাঁর পায়ের ভেতরে রড ঢুকে যায়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রাতে অপরিচিত লোকজন চলাচলের সময় গর্তে পড়ে আহত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত সেখানে দুজন মারা গেছেন।
রাকিব হোসেন, আদাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা

জোতমোড়া গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইকচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘মাসির (মাস) পর মাস ধরি রাস্তায় পুকুর কাটে থৈইছে (রেখেছে)। সারার (মেরামত) নাম নিই। এমন কাম (কাজ) মানষে (মানুষ) করে নাহি।’

এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ঘরের পেছনে ভাঙা কালভার্ট। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ১০ মাসে ৫০টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। গত শনিবার একটি নছিমন পড়ে গিয়ে আটজন শ্রমিক আহত হন। রোববার একজন শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন।’

আদাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রাকিব হোসেন বলেন, রাতে অপরিচিত লোকজন চলাচলের সময় গর্তে পড়ে আহত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত সেখানে দুজন মারা গেছেন। কালভার্টটি দ্রুত নির্মাণ করা দরকার।

ঠিকাদার সাইদুর রহমান বলেন, পুরোনো কালভার্ট ভাঙার কাজ অন্য এক ব্যক্তি পেয়েছিলেন। সেটি করতে দেরি হয়েছে। এ ছাড়া জিকের (গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্প) পানি প্রবাহ সচল রাখার জন্য স্থানীয় লোকজন রাস্তা কেটে বাঁশের চরাট দিয়েছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে। দুর্ঘটনার বিষয়ে তাঁর জানা নেই।

উপজেলা প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, নানা জটিলতায় কাজ শুরু হয়নি। কিছু দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। তবে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে তাঁর জানা নেই। সড়ক ভাঙার ব্যাপারে সেখানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া আছে বলে তিনি দাবি করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়ে একজন ফোন করে তাঁকে জানিয়েছেন। উপজেলা প্রকৌশলীকে দ্রুত কালভার্ট নির্মাণকাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।