টাঙ্গাইলের মির্জাপুর
ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে নষ্ট ৩০ একর জমির ধান
এক যুগের বেশি আগে ওই ইটভাটা স্থাপিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় এর মালিকানা পরিবর্তিত হয়েছে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় এসকে ব্রিকস নামের অনুমোদনহীন একটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় ৩০ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ওই ইটভাটা উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া এলাকায় অবস্থিত।
এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক যুগের বেশি আগে ওই ইটভাটা স্থাপিত হয়। বিভিন্ন সময় এর মালিকানা পরিবর্তিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ বছর ধরে গাজীপুরের সফিপুরের মো. সাইজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ইটভাটাটি চালাচ্ছেন।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এবং এর সংশোধিত আইন, ২০১৯ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লিনিকের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ আইনটি উপেক্ষা করে কৃষিজমিতে স্থাপিত ওই ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার আশপাশেই আবাসিক বাড়ি, হিলড়া বাজার, হিলড়া আদাবাড়ি মোকছেদ আলী উচ্চবিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ইটভাটা ঘেঁষেই মির্জাপুরের কুর্ণী-ফতেপুর সড়ক। এর দুই পাশে হিলড়া ও থলপাড়া গ্রামের অবস্থান। ওই ইটভাটায় কাঁচামাল হিসেবে মাটি, কয়লা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা ও ইট পরিবহনের জন্য ভারী ট্রাক চলাচল করায় সড়কটির বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রায় ২০ দিন আগে ভাটায় ইট পোড়ানো বন্ধ হয়। ভাটার আগুন নেভানোর সময় হঠাৎ বিষাক্ত গ্যাসের গন্ধ পান তাঁরা। পরে ধানের পাতা লালচে আকার ধারণ করে। ধানগুলো কেবল হলুদ রং ধারণ করছিল।
ইটভাটার পাশে থলপাড়া গ্রামের সাবেক সেনাসদস্য আলী হোসেনের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘সাইজুদ্দিন প্রায় ১০ বছর ধইর্যা ভাটাটি চালাইতাছে। মিস্ত্রিরা কইছিল আগুন নিভাইতে ১৫ দিন লাগব। সাইজুদ্দিন কয়, “আমার চ্যায়া ক্ষমতা কাররে। খালি আগুন নিভা।” দুই দিনের মধ্যে আগুন নিভাইল। আর দুই দিনের ভিতরেই ধান মইর্যা গেল। হে কারও কথাও শুনে না। ভয় দেহায়। পুলিশের কতা কইলে কয়, “পুলিশ ক্যারা। আমি থানা কিনা নইছি।”’
স্থানীয় জুয়েল মিয়া, জহের আলী, শাহাদৎ হোসেন, নারায়ণ চন্দ্র, মান্য সরকার, দীনেশ ডাক্তারের জমির ধানসহ আরও প্রায় ১৫ একর জমির ধানের একই অবস্থা। হিলড়া গ্রামের শহীদ সিকদার জানান, তাঁদের সেচযন্ত্রের আওতায় প্রায় ১৫ একর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছিল, যা ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে নষ্ট হয়ে গেছে।
সাইজ উদ্দিনকে ফোন করলে তিনি তা ধরেন। পরে পরিচয় দেওয়ার পর তিনি সংযোগ কেটে দেন। তারপর কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।