প্রতিরোধক দেওয়ায় এখন বাধ্য হয়ে অনেকে প্রতিরোধকের সামনে মালামাল নামিয়ে পুনরায় ছোট গাড়িতে করে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন
ছবি: আল–আমিন

‘ভারী যানবাহন চলাচলে সড়ক নষ্ট হয়’—এমন অজুহাতে গাজীপুর নগরের বিভিন্ন সড়কে বসানো হয়েছে লোহার তৈরি বিশেষ একধরনের প্রতিরোধক। এতে সড়ক সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় পণ্যবাহী গাড়িগুলো আর এসব সড়কে চলতে পারছে না। ফলে আশপাশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টরা বিপাকে পড়েছেন। কাঙ্ক্ষিত পণ্য পরিবহনের জন্য এখন তাঁদের অতিরিক্ত টাকা খরচের পাশাপাশি খুঁজতে হচ্ছে বিকল্প পথ।

তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভাষ্য অনুযায়ী, সড়কগুলো শাখা সড়ক হওয়ায় পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে চলাচল করায় পিচ উঠে দিন দিন সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই সড়ক রক্ষা করতেই এ ধরনের প্রতিরোধক দিয়েছেন তাঁরা। তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, সিটি করপোরেশন কোনো রকম নোটিশ বা বিকল্প ব্যবস্থা না রেখেই সড়কগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।

সিটি করপোরেশনের ভেতরে অবস্থিত প্রায় সব কটি কারখানাই পণ্য পরিবহনের জন্য এসব সড়কে ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রতিরোধক দেওয়ায় এখন আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান বা মালবোঝাই গাড়ি ঢুকতে পারছে না এসব সড়কে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঝাঁজড় বাসস্ট্যান্ড-তিনসড়ক, বাইপাস রেলগেট-জয়দেবপুর সড়ক ও কলেরবাজার-শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়ক—এই তিন সড়কের শুরু এবং শেষ অংশে প্রতিরোধক বসানো হয়েছে। প্রতিরোধক হিসেবে ফুটবল মাঠের গোলপোস্টের মতো দুটি লোহার পাইপের ওপর আড়াআড়ি একটি লোহার পাইপ বাঁধা হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের ভেতরে অবস্থিত প্রায় সব কটি কারখানাই পণ্য পরিবহনের জন্য এসব সড়কে ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রতিরোধক দেওয়ায় এখন আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান বা মালবোঝাই গাড়ি ঢুকতে পারছে না এসব সড়কে। বাধ্য হয়ে অনেকে প্রতিরোধকের সামনে মালামাল নামিয়ে পুনরায় ছোট গাড়িতে করে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে প্রতিরোধকগুলো স্থাপন করেছেন। প্রতিরোধকগুলো স্থাপন করায় সড়কে যান চলাচল কমে গেছে অনেকাংশে। বিশেষ করে কোনো ধরনের ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান বা মালবোঝাই গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। তাই এতে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়ছেন, আবার কাউকে ফিরে যেতে হচ্ছে আগের জায়গায়।

যেখানে ১০ টন বহন করার কথা, সেখানে তারা বহন করছে ২০ থেকে ২৫ টন। এটা সড়কের জন্য ক্ষতিকর, আবার সাধারণ মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।
মো. আমিনুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গাজীপুর সিটি করপোরেশন

ধীরাশ্রম রেলস্টেশন এলাকার হস্তশিল্প কারখানার মালিক মেহেদী হাসান জানান, সপ্তাহে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার কারখানা থেকে বিভিন্ন জায়গায় মালামাল পাঠাতে হয়। আগে কারখানার গেটের সামনে থেকে কাভার্ড ভ্যানে মালামাল তোলা হতো। কিন্তু প্রতিরোধক দেওয়ার পর থেকে কোনো ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান তাঁর কারখানার সামনে আসতে পারছে না। তাই এখন প্রথমে পিকআপ ভ্যানে মালামাল নিয়ে যেতে হচ্ছে মূল সড়কে। এরপর সেখান থেকে পুনরায় কাভার্ড ভ্যানে মালামাল ভরে পাঠাতে হচ্ছে গন্তব্যে।

মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। টানা লকডাউনের পর সবে ওঠাতে দাঁড়াতে শুরু করেছি। কিন্তু এর মাঝেই এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা আমাদের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগে যেখানে কারখানার সামনে থেকে একবারে ট্রাকে মালামাল ওঠানো যেত, এখন সেখানে ছোট পিকআপ ভ্যানে করে ১৫ থেকে ২০ বারে মালামাল নিয়ে যেতে হচ্ছে। ’

একই এলাকার পোশাক কারখানা ব্যবস্থাপক মো. শিমুল হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশন কোনো বিকল্প রেখে বা কারখানার মালিকদের জানিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারত। সবদিক থেকে রাস্তা বন্ধ থাকায় এখন মালামাল আনা-নেওয়া করতে অর্থ ও সময়—দুটিই বেশি লাগছে।

জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মূলত দূরদূরান্তের ভারী যানবাহনগুলো বিকল্প হিসেবে এসব সড়ক ব্যবহার করে। যেখানে ১০ টন বহন করার কথা, সেখানে তারা বহন করছে ২০ থেকে ২৫ টন। এটা সড়কের জন্য ক্ষতিকর, আবার সাধারণ মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। সার্বিক দিক বিবেচনা করেই প্রতিরোধকগুলো দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সড়কের পাশে থাকা বিভিন্ন কারখানা বা পণ্য পরিবহনের ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এসব এলাকায় কারখানা থাকার বিষয়টি বা এ ধরনের সমস্যার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এমন হয়েই থাকে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’