বাদামের ভালো ফলনে চাষিরা খুশি

তিন শতাধিক কৃষক তাঁদের জমিতে বাদামের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে।

থোকা থোকা বাদামের ফলন। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকায় সম্প্রতি
ছবি: সংগৃহীত

চর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম গাজী গত নভেম্বরে ধার করে তাঁর ৭০ শতাংশ জমিতে শাকসবজির আবাদ করেন। গেল তিন দফার বৃষ্টিতে অধিকাংশ সবজিই নষ্ট হয়। এতে বড় লোকসানের মুখে পড়েন তিনি। হতাশা ঝেড়ে নতুন উদ্যমে আরও এক একর জমিতে আবাদ করেন বিভিন্ন জাতের বাদাম। ফলনও ভালো হয়।

কয়েক দিন আগে স্থানীয় বাজারে জাহাঙ্গীর বিক্রি করেন ৬০ মণ বাদাম। দামও পেয়েছেন ভালো। জাহাঙ্গীর বলেন, সবজির ক্ষতি পুষিয়ে বাদামের প্রত্যাশিত ফলন তাঁর মুখে হাসি এনে দিয়েছে। হতাশা এবং ঋণ পরিশোধের চাপও কেটেছে অনেকটা।

জাহাঙ্গীরের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার চরকাশিম এলাকায়। তাঁর মতো উপজেলার বেশ কয়েকটি চর এলাকার আরও অন্তত তিন শতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে বাদামের আবাদ করে সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার মেঘনা, ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী ষাটনল, চর চারআনি, চর কাশিম, বোরোচর, চর ওয়েস্টার, চর বাহাদুরপুর, নয়াচর, চর লক্ষ্মীপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকার প্রায় ৫০ হেক্টর বেলে জমিতে বাসন্তী, বারী চীনাবাদাম-৫, বারী চীনাবাদাম-৬, সিংগা সাইস্টোরসহ বিভিন্ন জাতের বাদামের আবাদ হয়। তিন শতাধিক কৃষক তাঁদের পৈতৃক জমিতে বাদামের ওই আবাদ করেন।

গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর, ষাটনল, বোরোচর, নয়াচরসহ আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বেলে জমিতে রাশি রাশি বাদামখেত। সবুজ বাদামখেতের সৌন্দর্যে ভরে গেছে গোটা চরাঞ্চল। স্থানীয় কৃষকেরা ওই বাদামখেতের পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ খেত থেকে থোকা থোকা কাঁচা বাদাম তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি। কাঁচা বাদামের ঘ্রাণে ছেয়ে গেছে এলাকা।

উপজেলার ষাটনল এলাকার কৃষক মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, তিনি ৬০ শতাংশ জমিতে এবার বাদামের আবাদ করেন। পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিল না। সারও দিতে হয়নি তেমন। কম খরচে এবার বাদামের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে বাদামের ফলন হয়েছে ২০ থেকে ২৫ মণ। সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। দামও পাচ্ছেন ভালো। প্রতি মণ কাঁচা বাদাম ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, উৎপাদিত বাদাম বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে লাভের আশা করছেন। বাদামই তাঁর মলিন মুখে হাসি এনে দিচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ও রোগ-বালাইয়ের উপদ্রব তেমন না থাকায় এবার তাঁর উপজেলায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাদামের দানাগুলোও বেশ পুষ্ট হয়েছে। কৃষকেরাও ভালো দামে বিক্রি করছেন সেগুলো। এতে ভবিষ্যতে চরাঞ্চলে আরও বেশিসংখ্যক কৃষক বাদাম চাষে আগ্রহী হবেন।