তিন বছর বয়স থেকে নিয়ম করে প্রতি মাসে এক ব্যাগ রক্ত দিতে হয় রুবায়েত হাসানের শরীরে। জন্ম থেকেই বাঁ চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ। ওই চোখ বইয়ের বর্ণ চিনতে পারে না। ডান চোখই ভরসা। তার ওপর রয়েছে আর্থিক অভাব-অনটন। এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি এবার যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ভালো ফল অর্জন করেও আর্থিক সংকটের কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে তাঁর অনিশ্চয়তা কাটছে না।
রুবায়েত হাসানের বাবা আবদুল মালেক যশোরের একটি বেসরকারি উন্নয়ন (এনজিও) সংস্থায় চাকরি করতেন। ২০১৭ সালে চাকরি হারিয়ে তিনি ইজিবাইক ভাড়ায় চালানো শুরু করেন। দিনান্তে যে টাকা রোজগার হয়, তা দিয়ে সংসারের খরচ চলে। রুবায়েত ছাড়াও ছোট একটি মেয়ে আছে তাঁর। সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। দুই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে আবদুল মালেককে হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর রুবায়েত জন্ম থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। তিন বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে তার শরীরে এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে হচ্ছে। এ বাবদ মাসে এক হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। রক্তদাতা নিজেদের ঠিক করে রাখতে হয়।
আবদুল মালেক বলেন, ‘আমার ছেলে মেধাবী। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ বেশ। কিন্তু প্রতি মাসে তার চিকিৎসা ও লেখাপড়ার খরচ জোগাতে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভালো ফল করেও তার লেখাপড়া করানো নিয়ে আমি দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। তার উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করার মতো আর্থিক সংগতি আমার নেই। ভিটামাটি ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। মাঠে ধান চাষেরও কোনো জমিজমা নেই।’
রুবায়েত হাসান জানান, তাঁর মা গৃহিণী। শুধু বাবার ইজিবাইক চালানোর টাকায় সংসার চলে না। অভাব–অনটনের কথা শুনলে লেখাপড়ায় ঠিকমতো মন দিতে পারেন না। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।