ভিটা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট রইল না হতদরিদ্র পরিবারটির

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

টুনু মিয়া (৪৫) পেশায় ইটভাটার শ্রমিক। কাজ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখলেন, ভিটা ছাড়া বাড়িতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বসতবাড়ির সঙ্গে গোয়ালের তিনটি গরু, ঘরের আসবাব, কাপড়চোপড়, গোলার ধান-চাল—সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছেন পাশের বাড়িতে।

টুনু মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহজাদাপুর ইউনিয়নের শাহজাদাপুর গ্রামে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাঁর বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এক রাতের অগ্নিকাণ্ডে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে পথে বসেছেন টুনু মিয়া।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে হঠাৎ বাসিন্দা টুনু মিয়ার বসতবাড়ির গরুর ঘরে আগুনের সূত্রপাট ঘটে। এরপর তাঁদের বসতঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে ঘর দুটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘরে থাকা ধান-চাল, কাপড়চোপড় ও আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মারা গেছে তিন লাখ টাকা মূল্যের বিদেশি জাতের দুটি দুধেল গাভি ও একটি ষাড়। অগ্নিকাণ্ডে পরিবারটির প্রায় ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এতে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। গভীর রাতে প্রতিবেশীরা আগুন নেভাতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। তবে তাঁদের চেষ্টার কারণে আশপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, টুনু মিয়া বিজয়নগর উপজেলার একটি ইটভাটায় কাজ করেন। দুই শতাংশ জমির ওপর নির্মিত দুটি টিনশেড ঘরই তাঁদের সম্বল। এখানেই তাঁর স্ত্রী হালিমা আক্তার তিন মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। লালন-পালন করেন দুধের গাভি। মূলত এই গরুগুলোই ছিল তাঁদের পরিবারের প্রতিদিনের উপার্জনের অবলম্বন। ঘর ও গরু হারিয়ে নির্বাক হয়েছেন হালিমা আক্তার। পরিবারটি আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশীর বাড়িতে। নেই বিকল্প কাপড়, আহার ও বাসস্থান।

শাহজাদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য আসমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসবেন। এরপর কী করা যায়, সিদ্ধান্ত নেবেন। আপাতত আমি পরিবারটিকে পাশের এক বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদে থেকে কিছু করা যায় কি না, সেটাও দেখব।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মশার কয়েল থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে থাকতে পারে। পরিবারটির কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির বাড়ি পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা, ৫টি কম্বল ও ৫০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। তাঁদের পরবর্তীতে ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও।