ভুয়া অনুষ্ঠান দেখিয়ে ৬০০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে মামলা
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ভুয়া অনুষ্ঠান দেখিয়ে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা (জিআর) কর্মসূচির ৬০০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) আবদুল মাজেদ বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ (বিশেষ জজ) আদালতে এ মামলা করেছেন।
দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত কার্যালয়ের কৌঁসুলি আল মুজাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ দিকে মামলার পর আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা বিশেষ আদালতের জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার এ আদেশ দেন।
এ মামলায় আসামিরা হলেন দামুড়হুদা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আশরাফ হোসেন এবং একই কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক সাইফুর রহমান মালিক। তবে সাইফুর রহমান গত বছরের জানুয়ারিতে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে গেছেন। ২০১৬ সালে জীবননগর পিআইও দপ্তরে চাকরি করার সময় আশরাফ হোসেন ও সাইফুর রহমান ২ কোটি ১৮ লাখ ১ হাজার টাকা ৩০০ টাকা মূল্যের চাল আত্মসাৎ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জীবননগরে দায়িত্ব পালনকালে পিআইও আশরাফ হোসেন ও সাইফুর রহমান যোগসাজশ করে ভুয়া মাস্টাররোল ও বিল ভাউচার দেখিয়ে জিআর প্রকল্পের ৬০০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ করেন। পরে বিষয়টি তদন্ত করে দুদক প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানা গেছে, কোনো ধরনের প্রস্তাব বা চাহিদাপত্র না থাকা সত্ত্বেও জীবননগরের ২০০টি স্থানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শেষ দিকে (২৬ জুন) চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসককে ৬০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে জীবননগর উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল হাফিজ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে ৩০ জুন স্থানীয় খাদ্য গুদাম থেকে ৬০০ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করা হয়।
জীবননগরে চাল বরাদ্দ আসার পর কথিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে ২০০ আবেদনপত্র সংগ্রহ দেখানো হয়েছে। পরে আবেদনগুলো অ্যাডভান্স রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করেন সাইফুর রহমান। তবে আবেদনপত্রে আবেদনকারীর স্বাক্ষরের সঙ্গে অ্যাডভান্স রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের মিল পায়নি দুদক।
২০১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় এ বিষয়ে ‘জিআর প্রকল্পের ৬০০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এর আগে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম সরওয়ার সরেজমিন পরিদর্শন করে ওই অভিযোগের সত্যতা পান। তাঁর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেব প্রসাদ পালকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে ওই তদন্ত দলের সদস্য তরিকুল ইসলাম (বর্তমানে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) বলেছিলেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আশরাফ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা হবে শুনেছিলাম। তবে মামলা হয়েছে কি না, অফিশিয়ালি জানি না। মামলা হয়ে থাকলে আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’ সাইফুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।